ইতিহাস ও ঐতিহ্য – Bangla Green News https://bgn24.com সংবাদে নতুনত্বের সূচনায়! Tue, 18 Mar 2025 08:23:34 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.8.1 বড় বাপের পোলায় খায় https://bgn24.com/?p=4071 https://bgn24.com/?p=4071#respond Tue, 18 Mar 2025 08:23:33 +0000 https://bgn24.com/?p=4071 ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’ খ্যাত ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার। এটি পুরান ঢাকায় অবস্থিত।

এখানকার অধিবাসীদের জন্য ১৬৭৬ সালে মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান নির্মাণ করেন ঐতিহ্যবাহী শাহি মসজিদ। পরে ১৭০২ সালে নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এই চকবাজারকে রূপান্তর করেন আধুনিক বাজারে। সেই থেকে এ বাজার ভরে ওঠে সমঝদার মানুষের মুখরোচক খাবারে। আর ওই সময় থেকেই রমজান মাস এলে এখানকার রোজাদারদের জন্য তৈরি হয় নানা ধরনের বাহারি ইফতারি। বাণিজ্যের জন্য বসতে শুরু করে ভাসমান বাজার। সে ঐতিহ্য আজও বহমান।

পূর্বের ধারবাহিকতা বজায় রেখে চকবাজারসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে চোখে পড়ে মুখরোচক ইফতারির বাহার, যা হরহামেশাই মন কেড়ে নিচ্ছে রোজাদারসহ সবার।

বর্তমানে চকবাজার ছাড়াও পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, সদরঘাট, বংশাল, গুলিস্তান, ওয়ারী, লক্ষ্মীবাজার, বাবুবাজার, আরমানিটোলা, সুরিটোলা, কাপ্তানবাজার, চানখাঁর পুল, আজিমপুর, টিপু সুলতান রোড, নারিন্দাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাহারি ইফতারি পাওয়া যায়। পুরান ঢাকার সব পাড়া-মহল্লায় হরেক রকম ইফতার পাওয়া গেলেও চকবাজারের ইফতার স্থানীয় রোজাদারদের জন্য সারাদিন যেন মুখিয়ে থাকা ভোজন বিলাস।

এই ঐতিহ্যবাহী ইফতার ঢাকার ভোজন রসিকদের জন্য আকর্ষণ ও দর্শনীয়ও বটে।

এসব এলাকায় গেলে হাঁকডাক শোনা যায়, ‘এটা চকবাজারের সেরা, বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙ্গায় বইরা লইয়া যায়’, ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শাহী সূতি কাবাব’। এমন হাঁক ডাকে বুঝা যায় এটা রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার। যে বিক্রেতা যত আয়োজন করে ডাকতে পারেন, সে দিকে চোখে পড়ে ক্রেতাদের ভীড়। তাই তো বরাবরের মতো এবারো ঐতিহ্যবাহী চকবাজারে ইফতার সামগ্রীর বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে।

চকবাজারে দুপুরের পরপর দোকানিরা নানা পদের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন। পুরান ঢাকার বিশেষ খাবার যেমন- কাবাব, মোগলাই পরোটা, হালিম, শাহি জিলাপি, রেজালা, গরুর আচার, মুরগির আচার, লেগ রোস্ট, বোরহানির মতো খাবারের স্বাদ মানুষকে টেনে নিয়ে আসছে প্রতি রমজানে। চকবাজারে ইফতার বাজার বসে শাহি মসজিদের সামনে রোডের দুই পাশজুড়ে। পুরান ঢাকার স্থানীয়রা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোজন বিলাসীরা এখানে আসেন পছন্দের ইফতার সামগ্রী কিনতে।

গাজীপুর থেকে বন্ধুদের সাথে ইফতার বাজারে এসেছেন জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ফেসবুকে ইউটিউবে চকবাজারের জনপ্রিয়তা দেখে বন্ধুদের সাথে নিয়ে এলাম ইফতার কিনতে। অনেকদিন পর সব বন্ধুরা একসাথে হয়েছি। তাই ইফতার পার্টির ইফতার আমরা এখান থেকে কিনলাম। আমরা চিকেন গ্রিল, ডিম চপ, কবুতর রোস্টসহ অন্যান্য খাবার কিনেছি।

বরিশালের লঞ্চের যাত্রী হারুন হাবীব এসেছেন চকবাজারে ইফতার কিনতে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে বরিশাল যাচ্ছি, ছেলে-মেয়েরা মোবাইলে চকবাজারের ইফতারের ভিডিও দেখে আবদার করেছে তারাও এখানকার ইফতার খাবে। তাই ওদের আবদার পূরণের জন্য যানজটে কষ্ট করেও এখানে থেকে ইফতার কিনলাম।

‘বড় বাপের পোলায় খায়’-এর বিক্রেতা বলেন, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার। এখানে মানুষ আসবেই।

এবার প্রতি পিস কিমা পরোটা ১১০ টাকা, টান পরোটা ৮০ টাকা, চিকেন সাসলিক ১১০ টাকা, অ্যারাবিয়ান কাবাব ৮০ টাকা, মুঠি কাবাব ৬০ টাকা, হালিম ৩০০ /৪০০/ ৮০০ টাকা বাটি, বটি কাবাব ১২০ টাকা, দই বড়া ২৫ টাকা, শাহী জিলাপি ৩০০ টাকা, সাধারণ জিলাপি ২০০ টাকা, চিকেন চাপ ১৫০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ টাকা প্রতি পিচ, খাসির লেগ রোস্ট ৮০০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে হরেক রকমের শরবত, ছোলা, পেয়াজু, বেগুনি, ফালুদা, আলুর চপসহ নানা রকমের ফল।

ইফতার বিক্রেতা তাওসিফ আহমেদ বলেন, গতবারের তুলনায় আমাদের এবার বিক্রি ভালো। আমরা সবসময় খাবারের গুণগত মান ঠিক রাখার চেষ্টা করি। তাই আমাদের ক্রেতারা বার বার আমাদের কাছে আসেন।

চকবাজারের বেশিরভাগ ইফতার বিক্রেতারা বংশপরম্পরায় এখানে ব্যবসা করছেন। কারো ব্যবসা এখন তৃতীয় প্রজন্ম, কারো ব্যবসা চতুর্থ প্রজন্মের বংশধররা পরিচালনা করছেন। কিছু কিছু বিক্রেতা আবার মৌসুমি ব্যবসায়ী। তারা শুধু রোজার মাসে এখানে ইফতারের দোকানগুলো পরিচালনা করেন।

সূত্র : বাসস

]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=4071 0
একদিন এই পৃথিবীটা বাউলের পৃথিবী হবে…”বাউল সম্রাট শহ আব্দুল করিম https://bgn24.com/?p=3929 https://bgn24.com/?p=3929#respond Wed, 18 Sep 2024 02:19:02 +0000 https://bgn24.com/?p=3929 প্রখ্যাত শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য একবার বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-

“মানুষ আপনার গান বিকৃত সুরে গায়। আপনার সুর ছাড়া অন্য সুরে গায়। অনেকে আপনার নামটা পর্যন্ত বলে না। এসব দেখতে আপনার খারাপ লাগে না…?”

শাহ্ আবদুল করিম বললেন-
“কথা বোঝা গেলেই হইল…
আমার আর কিচ্ছু দরকার নাই…”

কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য আশ্চর্য হয়ে বললেন-
“আপনার সৃষ্টি… আপনার গান। মানুষ আপনার সামনে বিকৃত করে গাইবে। আপনি কিছুই মনে করবেন না… এটা কোন কথা… এটার কোন অর্থ আছে…?”

শাহ্ আবদুল করিম বললেন-
“তুমি তো গান গাও…
আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো…

ধর তোমাকে একটা অনুষ্ঠানে ডাকা হলো। হাজার হাজার চেয়ার রাখা আছে কিন্তু গান শুনতে কোন মানুষ আসে নাই। শুধু সামনের সারিতে একটা মানুষ বসে আছে…
গাইতে পারবে…? “
কালীপ্রসাদ কিছুক্ষন ভেবে উত্তর দিলেন-
“না… পারবো না…”
শাহ্ আবদুল করীম হেসে বললেন-
“আমি পারবো…
কারণ আমার গানটার ভেতর দিয়ে আমি একটা আদর্শকে প্রচার করতে চাই। সেটা একজন মানুষের কাছে হলেও। সুর না থাকুক… নাম না থাকুক… সেই আদর্শটা থাকলেই হলো। আর কিছু দরকার নাই… সেজন্যই বললাম শুধু গানের কথা বোঝা গেলেই আমি খুশি…”

কালীপ্রসাদ ভট্টাচার্য জানতে চাইলেই-
“সেই আদর্শটা কি…?”
শাহ আবদুল করীম আবার হেসে বললেন-
“একদিন এই পৃথিবীটা বাউলের পৃথিবী হবে…”
‘এই পৃথিবী একদিন বাউলের পৃথিবী হয়ে যাবে’।

এ কথাটা বলেছিলেন শাহ আব্দুল করিম। এবং উনার চোখে যে বিশ্বাস, মানে যুগ যুগ ধরে… আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমাদের দেশের কোনো রাষ্ট্রপতি কোনো প্রধানমন্ত্রীর চোখে এই বিশ্বাস নেই।… আমরা অনেক নেতাদের মুখে অনেক কথা শুনি, কিন্তু তারা বিশ্বাসে বলেন না কথাগুলো। তারা বলতে হয় বলে বলেন, নয় নিজের স্বার্থে বলেন, নয় লোককে ভুল বুঝানোর জন্য বলেন।…”

  • কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য

একবার সুনামগঞ্জে তাকে সংবর্ধনা দেয়ার কথা। প্রোগ্রামের শেষের দিকে মাইকে ঘোষণা আসলো, এবারে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের হাতে তুলে দেওয়া হবে তিন লাখ টাকার সম্মাননা চেক।

আব্দুল করিম বার্ধক্যে উপনীত। তিনি বোধহয় কানে ভুল শুনলেন। তার বিশ্বাস হচ্ছিল না। তিনি পাশে বসে থাকা তার একমাত্র সন্তান জালালকে বললেন, জালাল ইতা কিতা কয়! তিন হাজার টাকা! এ তো অনেক টাকা! এত টাকা দিয়ে আমি কি করতাম!

আব্দুল করিমকে আস্তে করে জানানো হলো, তিন হাজার নয়, টাকার অংকটা তিন লাখ! শাহ আব্দুল করিম অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি হতভম্ব। তিনি বললেন, তিন লাখ? সর্বনাশ, অত টাকা! এগুলো নিয়্যা আমরা কিতা করমু? আমরার টাকার দরকার নাই, মানুষ যে ভালোবাসা দিছে, সেইটাই বড় প্রাপ্তি। চল চল বাড়ি চল। বলেই তিনি বেরিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দিলেন।

একজন মানুষ কতটা আর নির্লোভ হতে পারেন!

দেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সাথে সম্পর্কের অবনতি নিয়ে তিনি বলেন,

‘ হুমায়ূন সাহেব অত্যন্ত জ্ঞানী-গুণী মানুষ। আমি তাঁকে শ্রদ্ধাও করি। আমাকেও তিনি শ্রদ্ধা করেন, ভালোবাসেন। একবার তিনি টিভিতে একটি অনুষ্ঠান বানানোর জন্য একজন লোককে আমার কাছে পাঠালেন। প্রচার আমি কোনোসময়ই চাইনি, তখনো তা-ই করেছিলাম। কিন্তু লোকটির চাপাচাপিতে ঢাকা গেলাম। হুমায়ূন সাহেব আমার সাক্ষাত্কার নেওয়ালেন, গান গাওয়ালেন। আমি ফিরে আসার সময় উনি সৌজন্যসাক্ষাত্টুকু পর্যন্ত করলেন না, গাড়ির ড্রাইভারকে দিয়ে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিলেন। আমার হাসি পেল। এই টাকার জন্য কি আমি এতদূর ঢাকা ছুটে গিয়েছিলাম? আমি হাওরের বনে-বাদাড়ে বড় হয়েছি, মনটা সে রকমই বড়। টাকা আমার কাছে কিছুই না। এই করিম টাকার ধান্ধা করলে এতদিনে অনেক বড়লোক হতে পারত! কই, কখনো তো টাকার পেছনে ছুটিনি। এ ঘটনাটি আমাকে খুব পীড়া দেয়। পরে অনুষ্ঠানটি প্রচারের তারিখও তিনি আমাকে জানাননি। সে ঘটনাই আমি সাক্ষাত্কারে বলেছিলাম। পরে আর কখনো হুমায়ূন আহমদের কাছে যাইনি। সত্য কথা বলার কারণে যদি সম্পর্কের অবনতি হয়ে থাকে—তাতে তো আমার আর কিছুই করার নাই।’

ব্যক্তিত্ব, আত্মসম্মানবোধ কাকে বলে বাউল দেখিয়ে গিয়েছেন।

তিনি একবার বলেছিলেন,
‘এত সংবর্ধনা, সম্মান দিয়ে আমার কী হবে? সংবর্ধনা বিক্রি করে দিরাই বাজারে এক সের চালও কেনা যায় না। পেটে যদি ভাত না থাকে করিম মেডেল গলায় দিয়ে কী করবে?’

স্পষ্টতায়, স্পর্ধায় কাটিয়েছেন এক বাউল জীবন।

প্রকৃতি ছিল তার প্রথম শিক্ষক। প্রকৃতিই তাকে নিখাদ সোনা করে গড়ে তুলেছে। পার্থিব জীবনের প্রায় দুই যুগ ধরে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেনি। এরপর তিনি ভর্তি হন নাইট স্কুলে। স্বাক্ষরজ্ঞান লাভের পর তিনি তার সহপাঠীদের নিয়ে গাজীর গান, বাউলা গান, ঘাটু গান, পালাগান, সারিগান, মালজোড় গান, কবিগানসহ বিভিন্ন অতি প্রাকৃতজনের গান গাইতেন। সে সময় ভাটি অঞ্চলের হাওরে নাও বাইছ (নৌকা বাইছ) হতো তখন করিম তার সহপাঠীদের নিয়ে নাওয়ে উঠে গাইতেন ‘কোন মেস্তুরী নাও বানাইছে কেমন দেখা যায় ঝিল-মিল-ঝিল-মিল করেরে ময়ূরপঙ্খী নাও’। এভাবে গানের মধ্য দিয়ে চলে তার বাউলগান চর্চা।

ছিলেন রাখাল বালক। স্কুলে কয়েকদিন মাত্র গিয়েছেন। সারাজীবন দরিদ্রতার সাথে লড়াই করেছেন। বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন প্রিয়তমা স্ত্রী সরলা। তবু গান ছেড়ে যান নি করিম। বরং এইসব প্রতিকূলতা তাকে আরো দৃঢ়চেতা করেছে।

ঈদের নামাজে গেছেন। এক মুরুব্বি তাকে দেখেই বললেন, ‘করিম ইসলাম ধ্বংস কইরা ফালাইতাছে। গানবাজনা ইসলামে হারাম, এরপরও সে গান গাইতাছে। এইটার বিহিত করা দরকার’।

তিনি ইমাম সাহেবকে সামনে রেখে সব মানুষের সামনে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গান গাওয়া ইসলামে হালাল কি না?’ ইমাম সাহেব বললেন—’গানের সুরে যদি আল্লাহকেও ডাকে, তাহলেও গুনা হবে’।

ব্যাস, আর যায় কই? ওই মুরুব্বি তাকে জিজ্ঞেস করলেন—গান ছাড়ব কি না?তিনি বললেল—সেটা কখনোই আমি পারব না। উত্তর শুনে ওই মুরুব্বি মানুষটি রেগে গেলেন। তিনি বললেন, ‘এত স্পর্ধা, ইমাম সাহেব ও মুরুব্বিদের মুখের ওপর কথা। সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’

এরপর তিনি বললেন, ‘এখন বললাম গান ছেড়ে দেব, পরে ছাড়লাম না। তাই এ ধরনের মিথ্যা কথা আমি বলতে পারব না। নিজে যা বিশ্বাস করি, তা-ই বলেছি। আপনার যদি এ কারণে আমাকে গ্রামে জায়গাও না দেন, তাতেও আমি রাজি।

এরপর থেকে প্রায় প্রতি শুক্রবারে জুম্মার নামাজের আগে-পরে মসজিদে মুসল্লিরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে—গান-বাজনা করে তিনি নাকি বেশরা কাজ করছেন।

তখন গ্রামের আশপাশে সারারাত ধরে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই ওয়াজে দেশের বিশিষ্ট ওয়াজিরা এসে আল্লা-রসুলের নাম না-নিয়ে উনা শ্রাদ্ধ করার কাজে যোগ দিয়েছিল। রাতভর অকথ্য ভাষায় তাকে গালিগালাজ করত। শেষে একসময় পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে গ্রাম ছাড়েন।

গানের জন্য তাকে ধর্মজীবীরা একঘরে করেছে, স্ত্রী সরলা আর শিষ্য আকবরের জানাযায় অংশ নেয় নি এলাকাবাসী।

শাহ আবদুল করিম লালনের সুযোগ্য শিষ্য। কেন? কারণ-শাহ্ আবদুল করিম তাঁর স্ত্রীকে মনে করতেন মুর্শিদ। ‘মুর্শিদ’ শব্দটার অর্থ-নেতা (আধ্যাত্মিক অর্থে অবশ্য)। শাহ আবদুল করিমের স্ত্রীর নাম ছিল আবতাবুন্নেছা। করিম আদর করে ডাকতেন: ‘সরলা।’

স্ত্রীকে ‘মুর্শিদ’ মনে করাটা সহজ নয়। অনেক শিক্ষিত আধুনিক পুরুষও এক্ষেত্রে পিছিয়ে। কেন? ঈশ্বর পুরুষ বলেই?। করিম কেন পারলেন? করিম বাউল বলেই পারলেন। বাউল বাংলার ধর্ম- বাংলা মাতৃতান্ত্রিক বলেই।

বাউলের স্ত্রী সরলা মারা যাওয়ার পর গ্রামের ইমাম সাহেব বললেন—’বাউলের স্ত্রীর জানাজা পড়ানোর দরকার নাই।’ আবার তার প্রিয় শিষ্য আকবর মারা যাওয়ার পর মসজিদের মাইকে তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করেনি। তার দোষ, সে বাউলের সঙ্গে থেকে গানটান গেয়ে নাকি বেশরা ও ইসলাম বিরোধী কাজ করেছে। তাই সে বাউলের মতোই কাফের হয়ে গেছে। তিনি বলেন,’বেতনভোগী ইমামের কথা শুনে আর রাগে-দুঃখে নিজেই আমার বাড়িতে কবর খুঁড়েছি। আকবরের জানাজা পড়িয়ে দাফন করেছি। গ্রামের কেউ কেউ আইছিল, কেউ কেউ আয়ে নাই।’

গ্রামীণ ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীলদের আচরণে বাউল আবদুল করিম নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন ‘কুলহারা কলঙ্কিনী’ বলে। শহরে এসে বাউল আবিষ্কার করেন, এখানকার ‘শিক্ষিত’ মানুষেরাও তাকে মানুষ ভাবতে পারে না। সেজন্যই হয়ত আবদুল করিমকে গাইতে হয়েছে, ‘এ জীবনে দূর হলো না.. বাউল করিমের পেরেশানি!’

‘মানুষের’ দেওয়া এসব কষ্ট বুকে নিয়ে আজকের এই দিনে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বাউল শাহ আবদুল করিম!

বাড়ির কাছে উজানধল বাজার। চাল আনতে সেখানে গেছেন তিনি। ফিরে এলে চুলো জ্বালাবেন— এ অপেক্ষায় বসে রইলেন গিন্নি। সামান্য সময়ের ব্যাপার এ বাজারসদাই। অথচ ঘণ্টা পেরিয়ে দিন যায়, সপ্তাহ পেরোয়। অবশেষে ১৮ দিন পর খবর পাওয়া গেল তিনি আছেন হবিগঞ্জে। এক ভক্তের বাড়িতে গান করছেন। এমনই খেয়ালি মানুষ ছিলেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম।

শাহ আবদুল করিম শুধুমাত্র বাউল ছিলেন না, তিনি একাধারে গণসংগীত শিল্পীও। সারাজীবন শোষিত বঞ্চিতদের পক্ষে গান লিখেছেন। তাঁর আঘাতের লক্ষ্য ছিলো ভণ্ড রাজনীতিবিদ, শোষক, পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদ। ধর্মের অপব্যবহার তো অবশ্যই।

শাহ আবদুল করিমের গানে বৈষ্ণব ধারার মীড়াশ্রয়ী সুরের ঝংকারের সঙ্গে সুফী ধারার গতিপ্রধান ছন্দের সম্মিলন ঘটেছে।

শাহ আব্দুল করিম রচিত পাঁচশতাধিক গানে যেমন সিলেটের ঐতিহ্য ও শিকড়ের সন্ধান মেলে তেমনি বৈষ্ণব-সুফী ধারার সাধন-ভজনের পরিচয়ও পাওয়া যায়। একদিকে বাস্তবজীবনের কঠিন কঠোর পথপরিক্রমা অন্যদিকে জগত-জীবন সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণ, সৃষ্টির রহস্য নিয়ে কৌতূহল শাহ আব্দুল করিমকে করে তুলেছে বাউল মরমী।

বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের পূর্বসূরি মরমি সাধকরা তত্ত্বকথা বলে গেছেন। সমাজে সাম্য সৃষ্টির আন্দোলন করেছেন। কিন্তু শাহ আবদুল করিমের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন মাত্রার। দেশের, দশের, জনগণের, সমাজের দুঃখ-দুর্দশার কথা তিনি তাঁর রচনায় উল্লেখ করে ভিন্নধর্মী সংগ্রাম করেছেন।

আবদুল করিমের জীবন সংগ্রাম এবং গানের সাধনা দেখে মনে হয়, এ যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলেরই গল্প। নিজের দারিদ্রের কথা গানের মধ্য দিয়ে বলতে গিয়েই শাহ আবদুল করিম লিখেছিলেন, ‘মাঠে থাকি গরু রাখি, ঈদের দিনেও ছুটি নাই, মনের দুঃখ কার কাছে জানাই’।

শাহ আবদুল করিম কাগমারী সম্মেলনে গান করে মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন এবং তাদের শ্রদ্ধা আদায় করে নেন।

শাহ আবদুল করিম বেড়ে ওঠার সময় লোক সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল পরিবেশ ছিল। শাহ আবদুল করিম ৫৪’র নির্বাচন ৬৯,এর গণ আন্দোলন, ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি পর্যায়ে স্বরচিত গনসঙ্গীত পরিবেশন করে জনতাকে দেশ মার্তৃকার টানে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করেছেন। তাঁর গণসঙ্গীতে মুগ্ধ হয়ে মাওলানা আবদুল হামিদ থান ভাসানী তাঁর পিটে হাত রেখে বলেছিলেন-বেটা, গানের একাগ্রতা ছাড়িও না, তুমি একদিন গণ মানুষের শিল্পী হবে।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণসঙ্গীত শুনে একশ পঁচাশি টাকা দেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১১ টাকা দিয়ে বলেন, তোমার মতো শিল্পীকে উপযুক্ত মর্যাদা দেয়া হবে।

মুখের বোল কাইড়া নিবে
রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে
আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলবো
প্রয়োজনে রক্ত দেবো
জীবন দিয়ে বাংলা রাখবো
ঢাকায় রক্ত দিছে বাংলা মায়ের সন্তান
আমরা রাখবো তাদের মান।।
~বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম,

(গানটি তাৎক্ষণিকভাবে বেধেছিলেন যখন শোনেন ঢাকার রাজপথ ভাষার জন্য রক্তে রঞ্জিত হয়েছে; ১৯৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি নেত্রকোনার একটি মঞ্চে গান গাইছিলেন।)

তার লেখা বইগুলো হচ্ছে- ‘আফতাব সঙ্গীত’ (আনু. ১৯৪৮), ‘গণসঙ্গীত’ (আনু. ১৯৫৭), ‘কালনীর ঢেউ’ (১৯৮১), ‘ধলমেলা’ (১৯৯০), ‘ভাটির চিঠি’ (১৯৯৮), ‘কালনীর কূলে’ (২০০১) ও ‘শাহ আব্দুল করিম রচনা সমগ্র’ (২০০৯)।

শুধু সুরের মূর্ছনায় সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে তাঁর কাছ থেকে বাহবা কুড়িয়ে নেয়ার লক্ষ্য আর সাধারণ গায়কের মতো ছিল না। তিনি সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি থাকতেন বলেই তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সুখ-দুঃখের সাথে তাঁর গভীর পরিচয় ছিল। তাঁর গানের কথা বা ভাষাগুলো তাই প্রমাণ করে। তাঁর গানের মধ্যে সাধারণ মানুষেরই চাওয়া-পাওয়ার সুরই বেজে উঠেছে।

“কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া
আমি ফুল, বন্ধু ফুলের ভ্রমরা
সখী গো আমি ফুল, বন্ধু ফুলের ভ্রমরা।”

একবার এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন- ‘আমি বেহেস্ত, দোজখ চাই না। জীবিত অবস্থায় আমার ভাটি অঞ্চলের বিপন্ন মানুষের সুখ দেখতে চাই। ওই মানুষগুলোর সুখ যারা কেড়ে নিয়েছে আমার লড়াই তাদের বিরুদ্ধে। একসময় তত্ত্বের সাধনা করতাম, এখন দেখি তত্ব নয়, নিঃস্ব-বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেহতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, আর সোনার বাংলা সোনার বাংলা করলে হবে না। লোভী, শোষক, পাপাত্মাদের আঘাত করতে হবে।’

‘বসন্ত বাতাসে সইগো
বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
আমার বাড়ি আসে
সইগো বসন্ত বাতাসে…’
-বাউল শাহ আব্দুল করিম

একবার তিনি রেডিও’র একটা চেক ভাঙ্গাতে গেলেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। আব্দুল করিমের পরনে ছেঁড়া পাঞ্জাবি। তাকে দেখে ব্যাংকের কেউ কি ভেবেছে কে জানে! কিন্তু আব্দুল করিম ভীষণ অপমানিত বোধ করেছেন। তিনি বিলাতে গান গাইতে গিয়েছেন। সেখানে দেখেছেন, মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু নিজের দেশে দেখলেন এখানে মানুষের মর্যাদা পদ পদবিতে, পোষাকে, চেহারায়।

সাক্ষাৎকারে তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন,
আমার পাঞ্জাবি ছেঁড়া তো কি হয়েছে, আমি কি এই দেশের নাগরিক না? আমার লুঙ্গিতে নাহয় তিনটা তালি বসানো, কিন্তু আমি তো ট্যাক্স ফাঁকি দেই নাই কখনো। তাহলে এত ব্যবধান, এত বৈষম্য কেন? মানুষ তো মানুষের কাছে যায়। আমি তো কোনো বন্যপশু যাইনি। বন্যপশুরও অনেক দাম আছে, এদেশে মানুষের কোনো দাম নেই, ইজ্জত নেই।

বসন্তে জন্মছিলেন বলেই হয়ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মাটির গন্ধ গলায় তুলে নিয়েছিলেন বাউল শাহ আব্দুল করিম।লাল সবুজের সুরের ডাক নাম শাহ আব্দুল করিম।

শাহ আবদুল করিমের ভাটির সুরের গান শুনে মনের তলায় জল ছলছল করে। বাঙালি মন লোকসুরের জাদুতে যত ভোলে, আর কিছুতে ততটা মজে বলে মনে হয় না। মায়ার টান খুব শক্তিশালী, যেমন তিনি লিখেছেন, ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে’!

এই মায়ার টানে তিনি কোনোদিন কালনি নদী ছেড়ে যাননি। মায়ার টানে পড়েই গ্রামীণ মানুষের সুখ–দুঃখ, প্রেম–ভালাবাসার ব্যালাড রচনা করে গেছেন।

গ্রিক নন্দনের শক্তি যেমন ট্র্যাজিক চেতনা, বাংলা সংস্কৃতির মর্মে তেমন পাই মায়া। মানুষের প্রতি মায়া, ছেড়ে আসা গ্রামের প্রতি মায়া, প্রকৃতির প্রতি মায়া—এমন হাজারো মায়ার টানে ভোগা মানুষ জানে, মায়ার বন্ধন কত শক্তিশালী। মৃত্যু ছাড়া তার বন্ধন নাকি ছেঁড়া যায় না।

শাহ আবদুল করিমের জীবন ও সৃষ্টিকর্ম ছেঁকে নিলে যা পাই, তা এই মায়া। মায়া বাংলাদেশের কৃষক সংস্কৃতির মূল রস। এটা আমাদের আধুনিক সাহিত্যেও ছড়িয়ে গেছে।

একজন স্বশিক্ষিত কবি। তার চেতনাই তার সৃজনের জ্ঞানশিক্ষা। বাংলার মাটি, জল, সবুজ, সুন্দরমা প্রকৃতিই তাঁর পাঠশালা। সেই পাঠশালার চিত্রছায়ায় পাঠ নিতে নিতে তিনি অনুধাবন করেছেন জীবনকে, জীবনের একক নিয়ামক শক্তিকে।তাইতো তিনি অকপটে বলতে পারেন, ‘কেউ বলে দুনিয়া দোজখ, কেউ বলে রঙের বাজার / কোনো কিছু বলতে চায় না, যে বুঝেছে সারাসার।’

তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার বোধহয় মানুষের ভালোবাসা। শাহ আবদুল করিমের গান মানুষের মুখে মুখে। আরও হাজার বছর বেঁচে থাকবে তার গান। তার গান গেয়ে অনেক শিল্পী জনপ্রিয় হয়েছেন। ভবিষ্যতেও হবে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বহুল চর্চা হচ্ছে তার গান। একজন সুর সাধকের জন্য এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে!!

শেষ বয়সে এসে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট, কিডনির জটিলতা, ফুসফুসে ইনফেকশন এবং বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।

চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে উজান ধল গ্রামে স্ত্রী সরলা বিবির কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।

কালণীর ঢেউ আছড়ে পড়া উজানধলের বাড়িতে প্রিয়তমা স্ত্রী সরলার পাশে আজ চিরনিদ্রায় শায়িত বাউল সম্রাট । সেই সমাধি ঘিরে আজো প্রতিটি ক্ষণে বেজে উঠে তার শিষ্যদের বাঁশির করুণ রাগিনী কখনোবা কাঠিঢোলে উতাল শব্দে মুখর হয়ে উঠে উজান ধলের আকাশ বাতাস।

‘চলিতে চরণ চলেনা, দিনে দিনে অবশ হই, আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই’ মৃত্যুর কিছুদিন আগেই তিনি গানটি লিখেছিলেন।

প্রতিটি মানব জীবনের চরম বাস্তবতার কথা এতটা সহজে বলতে পারার অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন শাহ আবদুল করিম।

বসন্তে বাতাসে মিশেও থাকে বাউল, মিশে থাকেন শাহ্ আব্দুল করিম।
Collected সুত্র : ইন্টারনেট।

]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=3929 0
“বিজ্ঞানী” জামাল নজরুল ইসলাম, ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন https://bgn24.com/?p=3678 https://bgn24.com/?p=3678#respond Sat, 24 Feb 2024 10:46:53 +0000 https://bgn24.com/?p=3678 ২০১২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে হিগস বোসন কণা আবিষ্কারের সময় সারা পৃথিবীর পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা চলছিল। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন, ১৯৬৪ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস এবং আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী যে অনন্য বোসন কণার অস্তিত্বের কথা তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করেছিলেন, যা পরে হিগস বোসন কণা নামে পরিচিতি পায়, তা বাস্তবে পাওয়া যাবে কি না, তা দেখার জন্য। কিন্তু সে সময় এই উত্তেজনার পাশাপাশি অপবিজ্ঞানীরা আরও একটি উত্তেজনা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্য সব প্রচারমাধ্যমে, যেটা ছিল খুব মারাত্মক। প্রচার করা হচ্ছিল, লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে কৃত্রিমভাবে বিগ ব্যাং সংঘটনের কাজ চলছে, যার ফলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ রকম পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কাল্পনিক ঘটনাকে বিজ্ঞানের মোড়ক

দিয়ে অনেক গল্প-উপন্যাস লেখা হয়েছে। সিনেমাও তৈরি হয়েছে অনেক। অনেক মানুষ বিজ্ঞান ও কল্পনার মাঝখানের সীমানা বুঝতে না পেরে এসব কাল্পনিক কাহিনি বিশ্বাস করে ফেলেন। ২০১২ সালে এ রকম অনেকের ভেতর একটা ভয় ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়ে গেল, পৃথিবী কি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে? বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও পৃথিবী ধ্বংসের এই তত্ত্ব প্রচারিত হচ্ছিল। তখন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকেই এগিয়ে এলেন মানুষকে আশ্বস্ত করার জন্য। বাংলাদেশের মানুষ যাঁর কথায় সবচেয়ে বেশি আশ্বস্ত হলেন, তিনি ছিলেন প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম। এর আগেও অনেকবার এ রকম হয়েছে।

১৯৮৮ সালে হঠাৎ বাংলাদেশে গুজব ছড়িয়ে পড়ল, ঢোলকলমিগাছের পাতা ছুঁলেই নাকি মানুষ মারা যাচ্ছে। গুজবের ডালপালা গজাতে শুরু করল। অনেকে বলতে লাগলেন, পাতা নয়, পাতায় যেসব পোকা হয়, সেসব পোকা মানুষের গায়ে বসলেই মানুষ মারা যাচ্ছে। তখনো বাংলাদেশে ডিজিটাল যুগ শুরু হয়নি। মানুষ খবরের কাগজ পড়ে এবং রেডিও-টেলিভিশন থেকে খবর সংগ্রহ করত। অনেক সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হতে লাগল, দেশের কোথায় কতজন মারা গেছে ঢোলকলমির সংক্রমণে। হুজুগে মানুষ এসব আরও ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে প্রচার করে। লোকে দূর থেকে কেরোসিন ছিটিয়ে, বাঁশের আগায় করে আগুন দিয়ে ঢোলকলমিগাছ পোড়াতে শুরু করল। এর মধ্যেই একদিন টেলিভিশনে সরাসরি অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম নিজের হাতে ঢোলকলমিগাছের পাতা মেখে, পাতার পোকা নিজের হাতে ধরে দেখালেন, এসবে মানুষের কোনোক্ষতি হয় না। গুজব থেমে গেল। অপবিজ্ঞানের সামনে বিজ্ঞানের সরাসরি প্রয়োগ, সাধারণ মানুষের বোধগম্য আকারে প্রকাশ যে কত কার্যকর, তা প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম অনেকবারই দেখিয়েছেন।

এ ব্যাপারে পৃথিবী বিখ্যাত আরেক পদার্থবিজ্ঞানীর সঙ্গে জামাল নজরুল ইসলাম স্যারের খুব মিল আছে। তিনি ছিলেন রিচার্ড ফাইনম্যান। কাছাকাছি সময়েই রিচার্ড ফাইনম্যান যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সামনে উন্মোচন করেছিলেন ১৯৮৬ সালের নভোযান চ্যালেঞ্জারের বিস্ফোরণের প্রধান বৈজ্ঞানিক কারণ। ফাইনম্যান সরাসরি প্রচারিত টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে এক গ্লাস বরফের ভেতর এক টুকরা রাবার রেখে দেখিয়েছিলেন, তীব্র ঠান্ডায় কীভাবে রাবারের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে চ্যালেঞ্জারের রিংয়ের রাবার ঠিকমতো কাজ করেনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মার্কিন প্রফেসর রিচার্ড ফাইনম্যান এবং বাংলাদেশের প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম সহকর্মী ও বন্ধু ছিলেন। ক্যালটেকে তাঁরা একই ডিপার্টমেন্টে কাজ করতেন, থাকতেনও কাছাকাছি বাসায়। ফাইনম্যান জামাল স্যারের বাসার বাঙালি রান্না খেয়ে খুব আনন্দ পেয়েছিলেন। বিশেষ করে বাঙালি পদ্ধতিতে রান্না করা মাছের তরকারি।

পৃথিবীর প্রথম সারির পদার্থবিজ্ঞানীদের একজন ছিলেন আমাদের জামাল স্যার। কেমব্রিজ, ক্যালটেকের মতো পৃথিবীর বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পরও যিনি বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন মাটির টানে, বাংলার সংস্কৃতির টানে। ১৯৮৪ থেকে ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞান, প্রকৌশল, অর্থনীতিসহ প্রায় সব বিষয়েই যেমন গভীর বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রমাণ রেখেছেন, তেমনি সরাসরি জড়িয়ে ছিলেন সংগীতসহ শিল্পকলার অন্য অনেক শাখার সঙ্গে। তিনি খুব ভালো পিয়ানো বাজাতেন, আইনস্টাইনের মতো বেহালা বাজাতেন, সত্যেন বসুর মতোএসরাজ বাজাতেন। চমৎকার গান করতেন। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে জামাল স্যারের সংগীতানুষ্ঠানও হয়েছে। আর বিজ্ঞান! জামাল স্যারের হাতে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট।জামাল স্যারের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ঝিনাইদহে। তাঁর বাবা খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলাম ছিলেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার সাব–জজ। বাবার কর্মসূত্রে তাঁর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা হয়েছে কলকাতায়। সেখান থেকে চট্টগ্রামে আসার পর কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেছেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। তারপর চলে গেলেন পশ্চিম পাকিস্তানের মারির লরেন্স কলেজে। সেখান থেকে পাস করলেন সিনিয়র কেমব্রিজ (যা এখন ও লেভেল নামে পরিচিত) এবং হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ (এ লেভেল) পরীক্ষা। তারপর চলে গেলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। সেখান থেকে বিএসসি পাস করলেন। তারপর সোজা ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএসসি পাস করলেন, পরের বছর এমএসসি। কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে তিনি যোগ দিলেন সেখানকার ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। এ সময় তাঁর গবেষণার বন্ধু ছিলেন স্টিফেন হকিং। এরপর যোগ দিলেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ক্যালটেকে। রিচার্ড ফাইনম্যানের সঙ্গে বন্ধুত্ব সেখান থেকেই। ক্যালটেকের পর তিনি কাজ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনে। ১৯৭৩ সালে ফিরে এলেন লন্ডনে। যোগ দিলেন কিংস কলেজে। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আবদুস সালাম খুব ভালোবাসতেন জামাল স্যারকে। আবদুস সালামের প্রতিষ্ঠিত ইতালির ইন্টারন্যাশনালথিওরিটিক্যাল ফিজিকস সেন্টারের ফেলো ছিলেন জামাল স্যার। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জামাল স্যার ছিলেন লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে একেবারে ফিরে এলেন। যোগ দিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। ১৯৮৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তুললেন আন্তর্জাতিক গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র। প্রফেসর আবদুস সালাম এই গবেষণাকেন্দ্রের উদ্বোধনী সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত এই গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন জামাল স্যার। এরপর ২০০৬ পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পরও তিনি ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। বাংলাদেশে দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি পেয়েছেন এ দেশের মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা। পেয়েছেন বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের স্বর্ণপদক, রাষ্ট্রীয় একুশে পদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার ইত্যাদি। কিন্তু সত্যিকারের বিজ্ঞানীদের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো তাঁদের আবিষ্কৃত জ্ঞানের প্রয়োগে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি। সে হিসেবে জামাল স্যারের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত তাঁর তিনটি মৌলিক বই দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স, রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি ও অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি; যেগুলো মহাবিশ্বের প্রতি বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করেছে। সারা বিশ্বের কসমোলজির শিক্ষার্থীদের জন্য এসব বই অবশ্যপাঠ্য। ১৯৭৭ সালে রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির কোয়ার্টারলি জার্নালে একটিছোট্ট টেকনিক্যাল পেপার ‘পসিবল আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স’ প্রকাশ করেছিলেন জামাল নজরুল ইসলাম। এরপর নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়েইনবার্গ, ফ্রিম্যান ডাইসন, স্টিফেন হকিং, জয়ন্ত নারলিকার প্রমুখ বিজ্ঞানী জামাল স্যারকে অনুরোধ করেন এই টেকনিক্যাল পেপারের একটি জনপ্রিয় ভার্সন রচনা করতে; যা সাধারণ পাঠকের বোধগম্য হবে। এর আগে এ রকম বিষয়ে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র বই প্রকাশিত হয়েছে। স্টিভেন ওয়েইনবার্গের ফার্স্ট থ্রি মিনিটস প্রকাশিত হয়েছে মাত্র এক বছর আগে। জামাল স্যার সবার অনুরোধে রচনা করলেন দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স। ১৯৮৩ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে এই বই প্রকাশিত হওয়ার পর মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তো বটেই, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। পরে জামাল স্যারকে অনুসরণ করে এ রকম বই আরও অনেকেই লিখেছেন। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত স্টিফেন হকিংয়ের আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম-এর আইডিয়া জামাল স্যারের দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স থেকে উৎসৃত। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী পল ডেভিস ১৯৯৪ সালে প্রকাশ করলেন তাঁর জনপ্রিয় বই দ্য লাস্ট থ্রি মিনিটস, যা জামাল স্যারের বইটির পরের অধ্যায় বলা চলে। পল ডেভিস তাঁর বইয়ের সাবটাইটেলে উল্লেখকরেছেন, ‘কনজেকসার্স অ্যাবাউট দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স’।আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটিতে রোটেটিং ফিল্ড বা ঘূর্ণমান ক্ষেত্রের গাণিতিক ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছেন জামাল স্যার। তাঁর গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে তিনি রচনা করেছেন আরেকটি মাইলফলক বই রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি। ১৯৮৫ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত এই বই মূলত গবেষক এবং শিক্ষার্থী–গবেষকদের জন্য লেখা। এই গাণিতিক ভিত্তি প্রয়োগ করেই পরবর্তীকালে স্টিফেন হকিং ব্ল্যাকহোলের ‘হকিং রেডিয়েশন’-এর আলো দেখতে পেয়েছেন। বিজ্ঞান মানুষের কৌতূহল মেটায়, হয়তো বিজ্ঞানের প্রতি কিছুটা আগ্রহও তৈরি করে। কিন্তু সত্যিকারের বিজ্ঞানশিক্ষার জন্য দরকার বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থ। জামাল স্যারের দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স-এ মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় ব্যাখ্যা করা হয়েছে গণিত ব্যবহার না করে। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের মূল ভাষা হলো গণিত। মহাবিশ্বের উৎস, গঠন, বিবর্তন এবং পরিণতির গণিত বুঝতে হলে একটা নির্ভরযোগ্য বইয়ের দরকার ছিল। সেই দরকার মিটিয়েছেন জামাল স্যার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে তিনি রচনা করেছেন অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি। ১৯৯২ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর সব সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমোলজির শিক্ষার্থীদের জন্য এই বই প্রধান বইয়ে পরিণত হয়েছে। ২০০১ সালে এই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয়েছে এর অনলাইন সংস্করণ। জামাল স্যার বাংলা ভাষায় রচনা করেছেন কৃষ্ণ বিবর। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইটি ব্ল্যাকহোলের ওপর বাংলায় লেখা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। সেই বইয়ের শুরুর দিকে জামাল স্যার লিখেছেন, অনাগত ভবিষ্যতে বিশ্বের কী অবস্থা হবে এবং কী ঘটনা ঘটবে, এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ব্যাপারে কৃষ্ণ বিবর-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এই ভূমিকার ব্যাপারটা তো আমরা সবাই দেখেছি। ব্ল্যাকহোল এখন আবিষ্কৃত হয়েছে, এর তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এদের পেছনে যে বিজ্ঞানীদের অবদান, তাঁদের কেউ কেউ নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। শুরুর দিকেএই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি যাঁরা তৈরি করে দিয়েছেন, আমাদের জামাল স্যার তাঁদেরই একজন। আমাদের খুব কাছের, একেবারে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেই হয়তো আমরা জামাল স্যারের মেধা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারিনি। যে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাকেন্দ্র তিনি নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন, সেই গবেষণাকেন্দ্রে আমরা সে রকম আন্তর্জাতিক মানের ফসল ফলাতে পারিনি। অবসর গ্রহণের পরও জামাল স্যার আমাদের মধ্যে ছিলেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে অনেক গবেষণা করেছেন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়েও। সম্ভবত জামাল স্যারই বাংলাদেশের একমাত্র বিজ্ঞানী, যিনি সরাসরি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ‘আমাদের দেশে বিদেশি সাহায্যের কোনো দরকার নেই। বিদেশি সাহায্য বন্ধ হলেই আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শিখব, বাধ্য হয়েই শিখব।’ জামাল স্যারের এ কথায় নীতিনির্ধারকদের কেউই কোনো গুরুত্ব দেননি সে সময়। ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ জামাল স্যারের জীবনাবসান হয়। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন তাঁর সৃষ্ট জ্ঞানের মধ্যে, তাঁর গবেষণা ও গবেষণাকেন্দ্রের মধ্যে। তাঁর স্মরণে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গবেষণাকেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র’। জামাল স্যারের বৈজ্ঞানিক উত্তরাধিকার বহন করতে হলে যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করতে হবে আমাদের।

(প্রদীপ দেব)

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক, আরএমআইটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া

সূত্র: কৃষ্ণ বিবর, আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স, রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি, অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি—জামাল নজরুল ইসলাম। দ্য লাস্ট থ্রি মিনিটস—পল ডেভিস।

]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=3678 0
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি https://bgn24.com/?p=2582 https://bgn24.com/?p=2582#respond Mon, 08 Aug 2022 06:47:01 +0000 https://bgn24.com/?p=2582 কালের বিবর্তনে হারিয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

রতি কান্ত রায়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

এক সময় গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ঢেঁকি ছিল। কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি প্রায় এখন বিলুপ্তির পথে।গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এক সময় ঢেঁকিতে ধান ভানার মনোরম দৃশ্য চোখে পড়তো। এখন আর গ্রাম বাংলায় ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখে পড়ে না ও শোনা যায় না ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ ।

শহরতো বটেই আজকাল অনেক গ্রামের ছেলে ও মেয়েরাও ঢেঁকি শব্দটির কথা জানলেও বাস্তবে দেখেনি। অনেক ছেলে ও মেয়েদের কৌতুহল কেমন করে মেশিন ছাড়া ধান থেকে চাউল বের করা হতো। আসলে ধানের খোসা ছাড়িয়ে চাউল বানানোই ছিল ঢেঁকির কাজ।

ঢেঁকি লোকজ ঐতিহ্যের সাথে জড়িত ধান ভানা বা শস্য কোটার জন‍্য ব‍্যবহৃত যন্ত্র বিশেষ। ঢেঁকি দ্বারা চাউলের ছাতু,ধান, চিড়া, মাসকালাই এর ডাল, মসলা, হলুদ, মরিচ ইত্যাদি ভাঙানো হয়।ঢেঁকিতে ধান ভাঙাতেন গ্রামের বৌ-ঝিরা তাদের সঙ্গে যোগ দিতেন পাড়ার কিশোরীরা। গ্রামের বধূরা ঢেঁকির তালে তালে তাদের বাপ দাদার আমলের গীত গেয়ে চলত।

বাঙালি জীবনে পিঠের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত ঢেঁকি । এক খন্ড পাথরের চটান বা কাঠ খন্ডে গর্ত খুঁড়ে মুষলের সাহায্যে শস্য কোটা হয়। মুষলটির মাথায় লোহার পাত জড়ানো থাকে ।

মুষলটি ৪/৫ হাত লম্বা একটি ভারী কাঠের আগায় জোড়া লাগিয়ে গর্ত বরাবর মাপে দুটি শক্ত খুঁটির উপর পুঁতে রাখা হয়। শস্য কোটার জন্য ঢেঁকির গর্তে শস্য ঢেলে দিয়ে ১/২ জন ঢেঁকির গোড়ায় ক্রমাগত চাপ দেয়। অন‍্যদিকে মুষলের আঘাতের ফাঁকে ফাঁকে আরেকজন গর্তের কাছে বসে শস‍্যগুলো নাড়তে থাকে।

ভাঙা চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি হত হরেক রকমের পিঠে। ঢেঁকি ছাঁটা চালের ফিরনি-পায়েস ও পিঠা- পুলির খুব স্বাদ হয়। বর্তমান প্রজম্ম সে স্বাদ থেকে বঞ্চিত। বয়স্ক মহিলারা গর্ব করে বলত এই ঢেঁকি আমার দাদা শ্বশুরের আমলের। সেই ঢেঁকি এখন অতীত।

সরিজমিনে গিয়ে দেখা যায় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের সতিপুরি গ্রামে ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য। তবে ঢেঁকির ঐতিহ্য এখনো বজায় রেখেছেন বলদিয়ার সতিপুরি গ্রামের বাসিন্দারা।

ধান ভাঙানোর চালের গুঁড়ি বা ময়দা দিয়ে প্রতি বছর পৌষ পাবর্ণে পিঠা তৈরি করেন এ গ্রামের বাসিন্দারা। সতিপুরি গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন শেখ(৫২) বলেছেন, ঢেঁকিতে ছাঁটা চাউলের গুঁড়ি দিয়ে বানানো পিঠের স্বাদটাই আলাদা।আর ঢেঁকিতে ছাঁটা চাউল রেখে দেওয়া যায় অনেক দিন পযর্ন্ত। পৌষ পাবর্ণের আগে ঢেঁকিতে চাউল ভাঙাতে আসেন গ্রামের মহিলারাই।

এক সঙ্গে হাত লাগান চাউল ভাঙানোর কাজে। কিন্তু এই পৌষ উৎসবের আগে চাউল ভাঙানোর একটা উৎসবের চেহারা দেখা দেয় বলদিয়ার সতিপুরি গ্রামে।উওর বলদিয়া গ্রামের রমেশ চন্দ্র অধিকারী(৭২ )বলেন, এখন সর্বত্রই অসংখ্য যান্ত্রিক ধান ভানার মেশিন ও ভ্রাম‍্যমান ধান ভানার মেশিন প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভেঙ্গে দেওয়ায় ঝকঝকে চাল পরিশ্রম কম এবং সময় সাশ্রয় হওয়ার ফলে ঢেঁকির সেই মধুময় ছন্দ কেড়ে নিয়েছে।

]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=2582 0
গ্রাম-গঞ্জে বিলুপ্ত পথে ছাউনির ঘর https://bgn24.com/?p=2362 https://bgn24.com/?p=2362#respond Wed, 20 Jul 2022 12:22:11 +0000 https://bgn24.com/?p=2362 গ্রাম-গঞ্জে বিলুপ্ত পথে ছাউনির ঘর

রতি কান্ত রায় কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

বিলুপ্তির পথে ছনের ঘর। গ্রাম ও শহরে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা বলে ছনের তৈরি ঘর। আগে গ্রাম-গঞ্জে প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষের ছনের ছাউনির ঘর ছিল।

পাশাপাশি উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের থাকার জন্য ছিল টিনের ঘর এবং ছনের ঘরগুলো ছিল অনেকটা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত।

অতি গরমে যেমন, ঠান্ডা ও আরামদায়ক তেমনি শীতের দিনে ছিল উষ্ণ গরম। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়লই গ্রামের শাহিন আলম (৫০) জানান, এই ঘরটি আমার বাবার আমলের স্মৃতি রক্ষার্থে এখন পর্যন্ত ঘরের খাম বদল, সামান্য মেরামত করে পাটের খড়ির বেড়ার পরিবর্তে বাশেঁর চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে ঘরটি ব্যবহার করার উপযোগী করে তুলেছি। তাছাড়া এই ঘর ছাউনি দেওয়ার মতো কারিগর নেই বললেই চলে।

কালের সাক্ষী বাপ দাদার আমলের এই ঘরটিও আমার বসতভিটায় আজ বিলীন হতে চলেছে।

বিশেষ কায়দায় ছনকে সাজিয়ে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে ছাউনি দেওয়া হতো।ধনি,দরিদ্র সরাই ছনের ঘরে বাস করত। তবে ধনিদের বাড়ীতে এক-দুটি টিনের ঘর দেখা যেত।

সাধারণত বন্যা, ভূমিকম্প, ঝড় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এসব ছনের তিন-চার বছর পর মেরামত বা নতুন খর ব‍্যবহার করা হত। দরিদ্র মানুষেরা ছনের বদলে খড় ব‍্যবহার করতো। আভিজাত্য অনুযায়ী ছনের ঘরে বিভিন্ন নকশা উন্নত মানের ছন ও ভালো ঘর কামলা ব‍্যবহার করা হত। জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে। ফলে ইট, পাথর, সিমেন্ট রড, টিন আজ দখল করে নিয়েছে অতীতের ছনের ঘরের স্থান।

এ ব্যাপারে গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কাইয়ুম (৮০) তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছনের ঘর না থাকায় মানুষ অসুস্থ হচ্ছে বেশি। কারণ মানুষ প্রাকৃতিক বাতাস ও আবহাওয়া থেকে আজ অনেক দূরে। সারাক্ষণ এসি ও বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করে আসছে। আগামী প্রজন্মের কাছে রূপকথা হয়ে থাকবে ছনের ঘর বা কুঁড়েঘর।

বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের শামীম কবির বুলবুল বলেন, গরীবের শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর হচ্ছে ছনের ঘর। গ্রামের হতদরিদ্র কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর একমাত্র আশ্রয় ছিল ছনের ঘর। বাঁশের খুঁটি এবং চাটাই কিংবা বাঁশের শলাকা দিয়ে তৈরি দোচালা বা চারচালা ঘরের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করা হতো ছন।

কিছুদিন আগেও গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যেত ছনের ঘর। বর্তমানে ছনের ঘর নাই বললেই চলে। বাংলার ঐতিহ্যর সঙ্গে এই ছনের ঘর ছিল খুব আরামের জায়গা। গরিবের পাশাপাশি সরকারি কার্যালয়সহ,ধনাঢ্য পরিবারের বাড়িতেও ছিল ছনের ঘর।

বসত ঘরের পাশাপাশি তৈরি করা হতো রান্না ঘর। আর ধান ভানার জন্য এসব ঘরে ব্যবহার করা হতো ঢেঁকি। আজ গ্যাসের চুলা বৈদ্যুতিক কুকার, রাইস মিল, আসায় একদিকে যেমন মানুষের জীবনকে আধুনিক করে তুলেছে, পাশাপাশি মানুষের সচ্ছলতায় হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ছনের ঘর। নতুন প্রজম্ম জানে না কুঁড়েঘর কী। আর প্রবিনদের কাছে কূঁড়েঘর কেবলই ম্মৃতি।

]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=2362 0
ঝিনাইদহে মানবসেবায় জাহেদী ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সবচেয়ে এগিয়ে https://bgn24.com/?p=2329 https://bgn24.com/?p=2329#respond Mon, 18 Jul 2022 10:38:05 +0000 https://bgn24.com/?p=2329 ঝিনাইদহে মানবসেবায় জাহেদী ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সবচেয়ে এগিয়ে

সাইফুল ইসলাম –

ঝিনাইদহ ঐতিহ্যবাহী জাহেদী ফাউন্ডেশন , একটা ইতিহাস! ঝিনাইদহের মানুষের স্মৃতিপটে দানবীর হাতেমতাই! গরীবদুঃখীর আবেগ ভালোবাসার নাম! বর্তমানে জাহেদী ফাউন্ডেশনের কর্ণধর। ঝিনাইদহের মানুষের মানবিক সকল দায়িত্ব পালন করতে মরহুম ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছেন জাহেদী ফাউন্ডেশন, ঝিনাইদহের যেকোনো শিক্ষার্থী টাকার অভাবে পরলেই শিক্ষার দায়িত্ব নিয়ে নেন জাহেদী ফাউন্ডেশন, টাকার অভাবে কেউ যেনো চিকিৎসা বঞ্চিত না হয়, তার দায়িত্ব নিয়ে নেয় জাহেদী ফাউন্ডেশন, বিধবা দুঃস্থ অসহায় নারিদের ভাতার ব্যাবস্হা করে দেন জাহেদী ফাউন্ডেশন, কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা যখন টাকার অভাবে কন্যাকে বিয়ে দিতে কষ্ট হয় তখন সহায়তার হাত সম্প্রসারীত করেন জাহেদী ফাউন্ডেশন, সামাজিক, ধর্মীও, রাজনৈতিক যেকোনো কাজেই সহযোগীতা প্রদান করেন জাহেদী ফাউন্ডেশন, করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালের সিলিন্ডার, হাসপাতালের যন্ত্র সামগ্রী ও ঔষধের অভাবে যেভাবে জাহেদী ফাউন্ডেশন সহযোগীতা করেছেন ঝিনাইদহসহ দেশব্যাপী তা চিকিৎসা সেবায় স্বরণীয় হয়ে আছে।

মাদকমুক্ত ঝিনাইদহ গড়ার প্রত্যয়ে ঝিনাইদহের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তঃ টুর্নামেন্ট খেলার ব্যবস্হা করেন প্রতিনিয়ত জাহেদী ফাউন্ডেশনের অর্থায়নের মাধ্যমে, শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে ভবন নির্মাণ ও শিক্ষা সাম্গ্রীর ব্যবস্হা করে দেন জাহেদী ফাউন্ডেশন, হাসপাতাল গুলোতে এম্বুলেন্স ও গাড়ীর ক্রয় করে দিয়েছেন জাহেদী ফাউন্ডেশন, হাসপাতালগুলোতে ভারিযন্ত্র ও চিকিৎসা সাম্গ্রী ঝিনাইদহসহ সারা দেশ ব্যাপি প্রদান করেন জাহেদী ফাউন্ডেশন, ঘরহীন বহু মানুষের ঘরের ব্যাবস্হা করে দিয়েছে জাহেদী ফাউন্ডেশন, কোরবানি ঈদে বহুবছরধরে কোরবানির মাংস ও ঈদুল ফিতরে খাদ্য সাম্গ্রী বিতরণ করে দুস্তদের মাঝে, প্রতিবছরের ন্যায় এবারের কোরবানিতেও নিজেস্ব অর্থায়নে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি ঝিনাইদহের গরীবের মাঝে মাংস ও নগদ টাকা প্রদান করেন জাহেদী পরিবার জাহেদী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে, অনুরুপভাবে ঈদুল ফিতরে চাউল, ডাউল, তেল, কাপড় ও নগদ টাকা বিতরণ করে আসছেন বিগত বহুবছর ধরে জাহেদী ফাউন্ডেশন।

ঝিনাইদহের ডিসি অফিসের সামনে সৌন্দর্য্য বর্ধক কারুকাজ ও ভবন নির্মাণ, এসপি অফিসে উঠান বৈঠক ও বহু স্হাপনা নির্মাণ সহ বহু প্রতিষ্ঠানে অকাতরে ব্যায় করে জাহেদী ফাউন্ডেশন, বহু মসজিদ করে দিয়েছে ঝিনাইদহসহ সারা দেশে, মাদ্রাসা ও হিফজখানা তৈরি করেছেন, স্কুল, কলেজ নির্মাণ করেছেন, ঝিনাইদহে খুব কম প্রতিষ্ঠানই আছে যেখানে জাহেদী ফাউন্ডেশনের অবদান শুন্য, শীতকালে অসচ্ছল পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়, নারিকেলবাড়িয়া আমেনা খাতুন কলেজে ৩ তলা বিশিষ্ট মুসামিয়া একাডেমিক ভবন নির্মাণ, যশোর কালেক্টরেট স্কুলে ৬ তলা বিশিষ্ট জাহানারা হুদা একাডেমিক ভবন নির্মাণ,যশোর বাঘারপাড়া মহিলা কলেজে ৪ তলা বিশিষ্ট সামছুল হুদা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ঝিনাইদহ কাঞ্চননগর স্কুল এন্ড কলেজে জাহেদী ফাউন্ডেশন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ নাহিদা জাহেদী ল্যাবরটরি ভবন নির্মাণ, এবং ঝিনাইদহ চেম্বার অফ কমার্সে রাহুল স্মৃতি অডিটরিয়াম নির্মাণ।

ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনসে স্যলুটিং ডায়াস ও বৈঠকখানা ঘর নির্মাণ, প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা বিকাশের জন্য মুসামিয়া বুদ্ধিবিকাশ বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে, ঝিনাইদহ পৌরসভা স্কুল এন্ড কলেজে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য স্কুলবাস প্রদান করা হয়েছে, ঝিনাইদহে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি বিস্তারের লক্ষ্যে ভাষাসৈনিক মুসামিয়া আইসিটি ইনকিউবেটর এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে, ডায়াবেটিস রোগীদের উন্নত সেবা দেবার লক্ষ্যে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় নির্মাণ করা হয়েছে মুসামিয়া ডায়াবেটিক সেন্টার, আন্তর্জাতিক মানসম্মত ফুটবল খেলোয়াড় তৈরির লক্ষ্যে যশোরে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে শেখ শামছুল হুদা ফুটবল একাডেমি, কক্সবাজার উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের পক্ষ থেকে নির্মাণ করা আবাসস্থান ও দৈনন্দিন খাবারের ব্যবস্থা, এছাড়াও প্রতিমাসে এতিম, বিধবা, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা এবং সামর্থ্যহীন অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে মাসিক সাহায্য প্রদান ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে।

ঝিনাইদহে আন্তর্জাতিক মানের মেডিক্যাল কলেজ, স্কুল ও কলেজ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন জাহেদী পরিবার। ঝিনাইদহের হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান চলে জাহেদী পরিবারের প্রতিষ্ঠান গুলোতে, ঝিনাইদহের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন এ পরিবার, এছাড়াও বহু জানা অজানা কাজ করে যাচ্ছেন নিরবে নিভৃতে, সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে অকাতরে বিলীয়ে যাচ্ছেন জাহেদী পরিবার লোকচক্ষুর অন্তরালে, যেখানেই মানবিক প্রয়োজন – সেখানেই জাহেদী ফাউন্ডেশন, দুর্যোগ, মাহামারীকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পাশে সহযোগীতার হাত সম্প্রসারীত করেন জাহেদী ফাউন্ডেশন, ঝিনাইদহ সহ দেশ ব্যাপি সময়ের প্রয়োজনে জাহেদী পরিবারের সহযোগীতা সদা অব্যাহত।

মারহুম ভাষা সৈনিক মুসামিয়ার সুযোগ্য সন্তান দেশবরেণ্য শিল্পপতি, গাজীপুর জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ করদাতা প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান, ঝিনাইদহের কৃতিসন্তান, ঝিনাইদহ জেলা সমিতির সভাপতি, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, দানবীর নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঝিনাইদহ বাসীর খেদমত করে যেতে চান। মুসা মিয়ার অন্য সন্তানেরা মানব সেবায় একাত্মা, শিল্লপতি ও ধনাঢ্য ব্যাক্তিত্ব, তাদেরকেও জাহেদী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমৃত্যু মানব সেবা অব্যাহত দান করুক। মরহুম মুসা মিয়ার চতুর্থ ছেলে বিশিষ্ট শিল্পপতি, ঝিনাইদহ জেলার সর্বোচ্চ করদাতা , ওঝিনাইদহ বাসী

]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=2329 0
ঝিনাইদহে আধুনিকতার ছোয়ায় গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে  ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি https://bgn24.com/?p=2125 https://bgn24.com/?p=2125#respond Tue, 05 Jul 2022 09:43:08 +0000 https://bgn24.com/?p=2125 ঝিনাইদহে আধুনিকতার ছোয়ায় গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে  ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি
সাইফুল ইসলামঃ
সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহে সাগান্না, সাধুহাটি ও মধুহাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম বাংলার এক সময়ের খাদ্যদ্রবাদি মাড়াইয়ের অন্যতম মাধ্যম ঢেঁকি এখন শুধুই স্মৃতি।
কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী টেঁকি। এক সময়ের কৃষাণ-কৃষাণিদের ভালো মানের চাল তৈরির প্রধান মাধ্যম ছিলো ঢেঁকি। গ্রামেগঞ্জে এখন পুরোপুরি লেগেছে আধুনিকতার ঢেউ। কালের বিবর্তনে পুরোপুরি হারিয়ে গেল ঢেঁকির ছন্দময় শব্দ।
গ্রামেগঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় এক সময় ঢেঁকি দিয়ে চাল তৈরি, চিড়া ভাঙা, আটা, পায়েসের চালের গুঁড়ো, খির তৈরির চাল বানানোর সেই ঢেঁকি– আজ হার মেনেছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনের কাছে। ধান ভানা, চাল গুঁড়ো করা, বড়ি তৈরি করা, আটা তৈরি চালের গুঁড়াসহ ঢেঁকির যাবতীয় কাজ এখন করছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনে। ঢেঁকি নিয়ে এক সময় জনপ্রিয় গান রচিত হয়েছিল।
‘ও বউ চাল ভাঙ্গেরে, ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, নতুন চাল ভাঙে হেলিয়া দুলিয়া, ও বউ চাল ভাঙেরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া’ এ রকম গান আর শোনা যায় না। ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না, সাধুহাটি ও মধুহাটি ইউনিয়ন থেকে এখন হারিয়ে গেছে। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন যেন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না। এক সময় ঢেঁকি ছিল এ উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের চাল ও চালের গুঁড়া তৈরির একমাত্র মাধ্যম। বধূঁরা ঢেঁকিতে চাল ভাঙতো গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার ঢেঁকি হারিয়ে গেছে। এখন ঢেঁকির সেই ধুপধাপ শব্দ আর শোনা যায় না।
ঝিনাইদহের সদর উপজেলার ৩ নং সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল-মামুন এর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি “দৈনিক অন্যদিগন্ত” কে জানান, সচারাচর ৪/৫ বছর পূর্বেও পরিবারের কৃষাণীরা সে সময় দৈনন্দিন ধান, গম ও জব ভাঙার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন। পাশাপাশি চিড়া তৈরির মত কঠিন কাজও ওই ঢেঁকিতেই করা হতো। বিশেষ করে সবে বরাত, ঈদ, পূজা, নবান্ন উৎসব, হিন্দুদের পূজা-পার্বন এবং পৌষ পার্বণসহ বিশেষ বিশেষ দিনে পিঠা-পুলি খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতেই ঢেঁকিতে চালের আটা তৈরি করা হতো।কিন্তু আধুনিকতা আর বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন ধান-গম ভাঙা যন্ত্র আবিষ্কারের কারণে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে গেছে ঢেঁকি
]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=2125 0
মৌলভীবাজারে টুরিস্ট বাস চালু! ৩৫০ টাকার বিনিময়ে ঘুরে দেখা যাচ্ছে দর্শনীয় স্থানগুলো https://bgn24.com/?p=1645 https://bgn24.com/?p=1645#respond Thu, 28 Oct 2021 06:43:54 +0000 https://bgn24.com/?p=1645 মাত্র ৩৫০ টাকার বিনিময়ে ঘুরে দেখা যাচ্ছে মৌলভীবাজারের প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলো। এটা সম্ভব হয়েছে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হওয়া ট্যুরিস্ট বাসের কারণে। এসব বাসে দল বেঁধে নির্বিঘেœ ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। সার্বিক নিরাপত্তায় চলা এসব বাসে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হওয়ায় ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন পর্যটকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার পর্যটন খাতকে আরও সমৃদ্ধ ও পর্যটকবান্ধব করতে ভূমিকা রাখবে এ উদ্যোগ।

কেবল দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান বা সবুজ টিলা নয়। মৌলভীবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে স্বচ্ছ, টলটলে জলের মাধবপুর লেক, পাখির কলতানে মুখর হাকালুকি হাওর ও বাইক্কার বিল। রয়েছে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, জলপ্রপাত। জেলার সাতটি উপজেলায়ই আছে নয়নাভিরামপর্যটন স্পট। লেবু বাগান, সীতেশ দেবের চিড়িয়াখানা, সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, রাজনগরের জলের গ্রাম অন্তেহরি, কুলাউড়ার গগনটিলা, লাঠিটিলার সবুজে মাখা অরণ্যাঞ্চল, বড়লেখার মাধবকু-, পরীকু- জলপ্রপাতের কারণে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ মৌলভীবাজার। এ জেলাকে আরও পর্যটকবান্ধব করতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে ট্যুরিস্ট বাস।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, পর্যটকদের অনেকে যাতায়াত সমস্যার কারণে সব পর্যটন স্পট দেখতে পারেন না। তা ছাড়া অটোরিকশাচালকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকেন। তাই পর্যটকদের সুবিধার্থে পর্যটক বাস চালু করা হয়েছে। এ বাস সার্ভিস চালুর ফলে মৌলভীবাজারের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণও বাড়বে। ভ্রমণপিপাসুদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হলে ভবিষ্যতে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন দুটি বাস জেলার বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে ছাড়বে। পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখিয়ে ফের ছেড়ে যাওয়া স্থলে ফিরে আসবে। প্যাকেজ ১-এর আওতায় রয়েছে চা-বাগান, গগণটিলা, মাধবপুর লেক ও হাকালুকি হাওর। জনপ্রতি ভাড়া ৩০০ টাকা। কেউ দুপুরের খাবার খেতে চাইলে ১০০ টাকা যোগ করে ভাড়া হবে ৪০০ টাকা। এ প্যাকেজের বাস প্রতিদিন সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গল থেকে যাত্রী নিয়ে বড়লেখার উদ্দেশে ছাড়বে।

প্যাকেজ ২-এর আওতায় রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বাইক্কাবিল। জনপ্রতি ভাড়া ৩৫০ টাকা। যারা দুপুরের খাবার খাবেন তাদের ৪৫০ টাকা করে দিতে হবে। একই সময়ে দ্বিতীয় প্যাকেজের বাস বড়লেখা থেকে ছেড়ে শ্রীমঙ্গল ঘুরে সেখানে ফিরে যাবে।

ট্যুরিস্ট বাসের সুপারভাইজার জুবেদ আলী জানান, গত ১৬ অক্টোবর বাস চলাচল শুরুর পর থেকেই পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে। সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার বাস দুটো চলাচল করছে। শ্রীমঙ্গল ও বড়লেখায় হানিফ ও শ্যামলী কাউন্টারে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে।

 

]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=1645 0
বঙ্গবন্ধুর সমালোচনার জবাব – প্রসঙ্গ রক্ষী বাহিনী https://bgn24.com/?p=1130 https://bgn24.com/?p=1130#respond Wed, 05 May 2021 19:50:18 +0000 https://bgn24.com/?p=1130 আমাদের দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত ও চুড়ান্ত বিজয়ের পরও পেয়ারে পাকিস্তান না থাকার একটা কষ্ট অনেকের মনে থেকে গেছিল। এই জাতীয় লোকদের আবার শ্রেণী বিন্যাস আছে যেমন একটা দল চেয়েছিল যে কোন মুল্যে পাকিস্তান থাক আর এক দল চেয়েছিল বাঙালী অধিকার প্রতিষ্ঠা পাক পুর্ব পাকিস্তান থাকার মাধ্যমে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এই দুটো গ্রুপ ই বঙ্গবন্ধুর কড়া সমালোচক বনে গেল। সমালোচকরা সমালোচনা করেন গঠন মুলক কিন্তু স্বাধীন বাংলায় তারা কৌশলি বিরোধিতা শুরু করে। এটাকে সাইকোলজিক্যাল বিরোধিতা বলা যেতে পারে। তুমি পাকিস্তানেই ভালো ছিলে এই মানষিকতা স্বাধীন বাংলা বির্নিমানে আমাদের পিছিয়ে দেয়। আমাদের সাহিত্য গান কিম্বা শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা স্বাধনতাকে দায়ী করে থাকি। ব্যাপারটা খুনের দ্বায়ে পিস্তলের ফাঁশির মত। আমাদের সাহিত্য গুলো নেতিবাচক আর হতাশা মুলক।

এই আলোচনা টা অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে তবে এই কারনে বল্লাম বঙ্গবন্ধুকে কি পরিমাণ বিপরীত স্রোত পাড়ি দিতে হচ্ছিল। আজও দেখেন আমাদের গানের লাইন ” হয়তোবা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না ” অথচ বাঙালী জাতি যতদিন থাকবে ততদিন মুক্তিযোদ্ধারা থাকবেন সবার অন্ততে। কিম্বা “মোরা চির বঞ্চিত এক মানব সমাজ পথের ধুলোর পড়ে রই, স্বাধীন হয়েছে মোর স্বদেশ ভুমি আমাদের স্বাধীনতা কই “।  দেশ আর স্বাধীনতাকে একহাত নিতে পারলে যেন আমরা হাফ ছেড়ে বাঁচতে পারি। যাহোক এবার আশি রক্ষী বাহিনী নিয়ে কিছু কথা বলতে। অনেক সমালোচকরা বলে থাকেন বঙ্গবন্ধু নিজের স্বার্থে এই বাহিনী গঠন করেছিলেন ও নিজের লক্ষ লক্ষ লোক তাতে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে যখন সেনাবাহিনীর সাথে রক্ষী বাহিনীর একাভুত করা হয় তখন লোক পাওয়া ১৪ হাজার। আমরা এমন এক অদ্ভুত জাতি।  প্রিয় পাঠক আমরা  এই শিরোনাম নামে রক্ষী বাহিনীর পুরো ইতিহাস ও সমালোচনা উত্তর উপস্থাপন করবো প্রত্যাশা করি আপনারা বিচার বিশ্লেষণ করবেন। আমরা উদাহরণ দিয় টাঙ্গাইলের  আনোয়ার উল আলম শহীদ সাহেবের তিনি “রক্ষীবাহিনীর সত্যি মিথ্যা  নিয়ে বই লিখেছেন, প্রকাশক অভিজাত প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা। এই বইটির ওপর লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের একটি রিভিউ এই প্রথম আলোতে গত ৬ আগস্ট ‘রক্ষীবাহিনীর উত্থান ও পতনের কাহিনি’ শিরোনামে প্রকাশিত ও হয়েছে। সেটা তুলে ধরা হল।

“আনোয়ার উল আলম শহীদকে আমি ৩৫ বছর ধরেই ঘনিষ্ঠভাবে জানি। ১৯৭৯ সালের শেষ দিকে আমি যখন জাকার্তায় আমাদের দূতাবাসে কাউন্সেলর ও মিশনের উপপ্রধান হিসেবে যোগ দিই, শহীদ তখন ওখানে ফার্স্ট সেক্রেটারি। এর আগে রক্ষীবাহিনীর ডেপুটি ডিরেক্টরের পদ থেকে তাঁকে সামরিক বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে আত্তীকরণ করা হয়। ওখান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি এবং সেখান থেকে জাকার্তায়।
দুই আনোয়ার উল আলম শহীদ জাকার্তা থেকে বদলি হয়ে যান কুয়ালালামপুরে, আমি জেদ্দায়। কুয়ালালামপুর থেকে তিনি যান ব্রুনাই দারুস সালাম, সেখান থেকে হংকং। শেষ জীবনে তিনি অতিরিক্ত সচিব, সচিব মর্যাদায় বাহরাইন ও স্পেনে আমাদের রাষ্ট্রদূত। ব্রুনাই থাকাকালে ড. সফিক সিদ্দিকী যখন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন শেখ রেহানার ডাকে প্রথম ছুটে যান তাঁর স্ত্রী ডা. সাঈদা খান।

এ ঘটনা আমি বছর পনেরো আগে প্রথম পড়ি ড. সফিক সিদ্দিকীর আত্মজীবনীমূলক বইয়ে। টাঙ্গাইলে শহীদ নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ছোটখাটো একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর; আর তাঁর স্ত্রী স্থাপন করেছেন তাঁদের গ্রাম ইছাপুরে একটি ক্লিনিক। আনোয়ার উল আলম শহীদ তাঁর এই বইয়ে যে কথাগুলো লিখেছেন, তার বেশির ভাগই ৩৫ বছর ধরে আমি তাঁর কাছ থেকে শুনে আসছি। এসব কথা শোনার পর তাঁর ওপর আমার চাপ ও তাগিদ আরও দৃঢ় হয়েছে যে এই কথাগুলো দেশের মানুষেরও জানানো জরুরি। বঙ্গবন্ধু ও রক্ষীবাহিনীকে নিয়ে অনেক বছর অপপ্রচার চলেছে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর। বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষীরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর নেতৃত্ব এবং অতুলনীয় অবদানের কারণে তখন তাঁকে সহ্য করতে পারেনি। এখনো পারে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর নাম উচ্চারণ করাটা যখন নিষিদ্ধ ছিল, তখন তাঁকে আক্রমণ করার জন্য এই রক্ষীবাহিনীর সৃষ্টিকেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে, রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, বাড়াবাড়িকে উদাহরণ হিসেবে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে একপক্ষীয় প্রচারণায়। র‌্যাব’ গঠিত হওয়ার পর রক্ষীবাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা নতুন করে বুঝতে পারি। ১৯৭২-৭৫ সময়কাল তো আরও বেশি ভয়ংকর ছিল। ‘র‌্যাব’-এর ‘ক্রসফায়ার’, ‘এনকাউন্টারে’ এখন বেশি মানুষ মারা পড়ছে? নাকি তখন রক্ষীবাহিনীর হাতে চরমপন্থী, উগ্রপন্থীরা বেশি? বাংলাদেশ বিরোধীরাও তো সাংঘাতিকভাবে সক্রিয় তখন। চীনপন্থীদের একাংশ তখন মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই বলে উপহাস করত। ১৯৭৪ সালের ২৭ জুন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর বাংলাদেশ সফরকালে ঢাকায় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে যে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, তা কারা দিয়েছিল? এরা তো আমাদের ‘একাত্তর’কেই প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করল।

৩০ লাখ শহীদকে অস্বীকার করল। তারপর আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, জাসদের কিছু উগ্রপন্থী এই ঢাকা শহরের কেন্দ্রে মিন্টো রোডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বাড়ি ঘেরাও করেছিল ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ। ঔদ্ধত্য কারে কয়? আর ওই বছরের ৭ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ছাত্র হত্যার অভিযোগে এখন ‘জাগপা’প্রধান শফিউল আলম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, বাঙালি—এসবের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছিল। তবে এটাও রূঢ় সত্য যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ—সব ‘লীগ’ নামধারীদের দখল প্রতিযোগিতা চলছিল, পাকিস্তানিদের বাড়িঘর, জমিজমা, ফ্যাক্টরি—কোনো নিয়মকানুনের বালাই ছাড়া। বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে দিল্লি থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম এলাম। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে লন্ডন থেকে বদলি হয়ে দিল্লি এসেছি। ঢাকা থেকে ফেনী, চারটি বড় বড় ফেরি, সকাল আটটায় রওনা হয়ে বিকেল চারটায় ফেনীতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালাম। (সেদিন ২৫ আগস্টও আট ঘণ্টা লেগেছে, যাত্রাবাড়ীর ট্রাফিক জ্যামের কারণে।) 

বাড়িতে যে কদিন থাকলাম, অনেকের মুখে এক কথা—রক্ষীবাহিনীর সবাই ভারতীয়, আসামের বা দক্ষিণ ভারতের, তা না হলে গায়ের রং এমন কালো কেন? আর এই যে মুহুরী নদীর পানিতে বন্যা হয়েছে, সবই বন্ধুরাষ্ট্রের পানি। বাংলাদেশকে ‘স্যাবোটাজ’ করে ভারতনির্ভরতার জন্য ভারত সব পানি ছেড়ে দিয়েছে! এসব লোককে তখন কে বলবে, ’৭১ সালের ভারতের সাহায্য না-হয় না-ই বলা হলো, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্ট তো ভারতের দেওয়া ডলার-পাউন্ড দিয়েই শুরু হলো; পেঁয়াজ, মসলাপাতি, সস্তা লুঙ্গি-শাড়ি, এমন সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাশের ভারত ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক দামে আর কোথাও পাওয়া যায় না।
রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত কতগুলো অভিযোগ রক্ষীবাহিনীর তৎকালীন তিন ডেপুটি ডিরেক্টরের কনিষ্ঠতম আনোয়ার উল আলম শহীদ স্বীকার করেছেন। বঙ্গবন্ধু এই রক্ষীবাহিনী প্রতিষ্ঠা করে এত নিন্দিত হলেন অথচ বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় বা তাঁকে হত্যার পর দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধে বা প্রতিবাদে রক্ষীবাহিনী কিছুই করতে পারল না, সেই ব্যর্থতার অকপট স্বীকৃতি আছে বইয়ে। শহীদ বলছেন, সেদিন তোফায়েল আহমেদ ছাড়া আর কেউ এতটুকু সাহস দেখাতে পারেননি। তিনি শেরেবাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীর ‘হেড অফিসে’ এসেছিলেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে নির্দেশ চেয়েও পাননি। কতগুলো জায়গায় তাঁরা ছোটাছুটি করেছেন, কিছুই করতে পারেননি। শহীদ পরিবার আয়েশা ফয়েজ এবং তাঁর সন্তান হুমায়ূন আহমেদ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীবদের যখন মোহাম্মদপুরে তাঁদের বরাদ্দ করা বাড়ি থেকে রক্ষীবাহিনী উচ্ছেদ করল, তখন রক্ষীবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূরুজ্জামান দ্রুত শহীদজায়া আয়েশা ফয়েজের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। 


আনোয়ার উল আলম শহীদ ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীতে নেতৃত্বেও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের, মওলানা ভাসানী এবং অন্য সব দলের নেতাদেরও কাছ থেকে দেখেছেন।”                  এই মুল্যায়নের পর আনোয়ার উল আলম শহীদের  বই থেকে রক্ষী বাহিনীর গঠনের ইতিহাস তুুুুলে ধরছি লেখাটি বড় করছি না কারন আমাদের পাঠকরা লম্বা লেখা পড়তে চাই না, তাই ধারাবাহিক ভাবে লিখবো। ১৮ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটা জতীয়  মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করার।১৮ ই ডিসেম্বর মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের জন্য জাতীয় মিলিশিয়া বোর্ড গঠন করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ কে সভাপতি করে ১১ সদস্যের কমিটির গঠন করা হয়। কমিটিতে আরও ছিলেন মওলানা ভাসানী সাহেব, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ,  কমরেড মনি সিং, এ এইচ এন কামরুজ্জামান, মনোরঞ্জন ধর,গাজী গোলাম মস্তফা,রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া, ক্যাপ্টেন সুজাত আলি, তৎকালিন তরুন নেতা তোফায়েল আহমেদ ও আব্দুর রাজ্জাক। বাকিটা সবার জানা বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে দেশে আসেন আর ১২ই জানুয়ারী তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। এরপর   ১৯৭২ সালের  ২৪ জানুয়ারী একটা প্রস নোটে বলা হয় ১।অনতিবিলম্বে একটি জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হইবে। তালিকা ভুক্ত হোক বা না হোক সকল মুক্তি যোদ্ধাদের এর আওতায় আনা হবে। ২। প্রত্যেক মহাকুমায় সেই এলাকার গেরিলাদের জন্য শিবির প্রতিষ্ঠা করা হইবে। শিবির পরিচালনা ব্যবস্থা এমন হইবে যেন  যুবকদের পুর্নগঠনের উপযোগী করিয়া প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেওয়া সম্ভব হয় । ৩। মহাকুমা ভিত্তিক শিবির গুলো সেই এলাকার সমস্ত গেরিলা বাহিনীর মিলনকেন্দ্র হইবে। ৪। উর্ধ্ব পক্ষে ১১ জন সদস্য নিয়া জাতীয় মিলিশিয়ার জন্য একটা কেন্দ্রীয় বোর্ড গঠন করা হইবে।বোর্ডের সদস্যদের সরকার কতৃক মনোনীত করা হবে । ৫। প্রত্যেক মহাকুমা শহরে জাতীয় মিলিশিয়ার জন্য মহাকুমা বোর্ড থাকবে। এখানেও অনাধিক ১১ জন ও সরকার কতৃক মনোনীত হবেন। ৬।প্রতিটি শিবিরের অস্ত্র সস্ত্র কার্যোপযোগী অবস্থায়  রাখা গুদাম জাত করা ও হিসাব পত্র রাখার জন্য  একটি করিয়া অস্ত্রগার থাকিবে। ৭।ট্রেনিং কার্যক্রম এমন ভাবে পরিচালনা করা হইবে যেন এই যুবকগন নিম্ন বর্নিত ভুমিকা পালন করতে পারে। ক) তারা যেন দেশের ২য় রক্ষা বাহু হইতে পারে।  খ) যখনি নিদিষ্ট ভাবে প্রয়োজন হইবে তখনি যেন তাহারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা পুর্নবাসন  উপযোগী হইতে পারে। গ)দেশের পুর্নগঠনের কাজে সরকারি সহায়তা হয় এমন বিভিন্ন কাজের কাজের উপযোগী হন। ৮। অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান, অপুষ্টকর খাদ্য এবং অপর্যাপ্ত বেতন ভাতার কারণে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গেরিলাদের বিরাট অংশ অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন তাই এবার এসবের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হইবে। তাহলে বলা চলে রক্ষী বাহিনী বঙ্গবন্ধু নিজের স্বার্থে করেননি বরং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কে দেশ গঠনের কাজে লাগাতে চেয়েছেন।  এ এম এম নুরুজ্জামান কে এই বাহিনীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তিনি আগরতলা মামলার আসামি ছিলেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গঠনের কাজে যে কজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন তাদের অন্যতম। পরবর্তী লেখায় আরও সমালোচনার জবাব দিব।…..চলবে। 

]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=1130 0
ঐতিহাসিক ৬ দফা ও বাঙালির মুক্তি https://bgn24.com/?p=1125 https://bgn24.com/?p=1125#respond Tue, 04 May 2021 19:33:13 +0000 https://bgn24.com/?p=1125 ঐতিহাসিক ৬ দফা -এটি ছিল বাঙালীর মুক্তির সনদ। বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির চিন্তা থেকে বাংলার মেহনতী মানুষকে বাঁচাতে এবং বাংলাদেশ কে মুক্ত করতে ঐতিহাসিক ৬ দফা প্রনয়ন করেন। জনসংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পাকিস্তানের মোট রপ্তানি আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (যেমন পাট) পূর্ব পাকিস্তান থেকে হবার পরও এতদাঞ্চলের জনগণের প্রতি সর্বস্তরে বৈষম্য করা হতো।এছাড়াও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা আনুপাতিক হারে ছিল না। পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিকভিত্তিতে ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এরফলে, অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা বৈষম্য সম্পর্কে প্রশ্ন বাড়াতে শুরু করেন।বৈষম্য নিরসনে শেখ মুজিব ছয়টি দাবি উত্থাপন করেন, যা ছয় দফা দাবি হিসেবে পরিচিত। বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত এই দাবি পরবর্তীকালে বাঙালির “প্রাণের দাবি” ও “বাঁচা মরার দাবি” হিসেবে পরিচিতি পায়।১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এ সম্মেলনেই শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন, যা ছিল কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা। ছয় দফার দাবিগুলো ছিল নিম্নরূপ–
১। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার হবে। সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান।
২। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দুইটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে–দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।
৩। সমগ্র দেশের জন্যে দুইটি পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা, না হয় বিশেষ শর্তসাপেক্ষে একই ধরনের মুদ্রা প্রচলন।
৪। ফেডারেশনের অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। তবে, প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গরাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে।
৫। অঙ্গরাষ্ট্রগুলো নিজেদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে, এর নির্ধারিত অংশ তারা কেন্দ্রকে দেবে।
৬। আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।
শেখ মুজিব এই দাবিকে “আমাদের বাঁচার দাবী” শিরোনামে প্রচার করেছিলেন। এই দাবির মূল বিষয় ছিল–একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত পাকিস্তানি ফেডারেশনে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন।এই দাবি সম্মেলনের উদ্যোক্তারা প্রত্যাখান করেন এবং শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ কারণে তিনি উক্ত সম্মেলন বর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন।

ছয় দফা দাবি পেশের পর তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে সাথে নিয়ে লাহোর থেকে ফিরছেন শেখ মুজিব
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা মার্চে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পর তিনি ছয় দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রচার কার্য পরিচালনা করেন ও প্রায় পুরো দেশই ভ্রমণ করে জনসমর্থন অর্জন করেন। এই ভ্রমণের সময় তিনি সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ঢাকায় বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে বন্দি হন। বছরের প্রথম চতুর্থাংশেই তাকে আটবার আটক করা হয়েছিল। ঐ বছরের মে মাসের ৮ তারিখে নারায়ণগঞ্জে পাট কারখানার শ্রমিকদের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়।তার মুক্তির দাবিতে ৭ই জুন দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। পুলিশ এই ধর্মঘট চলাকালে গুলিবর্ষণ করে যার কারণে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে আনুমানিক তিনজনের মৃত্যু হয়।

]]>
https://bgn24.com/?feed=rss2&p=1125 0