শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

বড় বাপের পোলায় খায়

সূত্র : বাসস / ৪৬৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’ খ্যাত ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার। এটি পুরান ঢাকায় অবস্থিত।

এখানকার অধিবাসীদের জন্য ১৬৭৬ সালে মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান নির্মাণ করেন ঐতিহ্যবাহী শাহি মসজিদ। পরে ১৭০২ সালে নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এই চকবাজারকে রূপান্তর করেন আধুনিক বাজারে। সেই থেকে এ বাজার ভরে ওঠে সমঝদার মানুষের মুখরোচক খাবারে। আর ওই সময় থেকেই রমজান মাস এলে এখানকার রোজাদারদের জন্য তৈরি হয় নানা ধরনের বাহারি ইফতারি। বাণিজ্যের জন্য বসতে শুরু করে ভাসমান বাজার। সে ঐতিহ্য আজও বহমান।

পূর্বের ধারবাহিকতা বজায় রেখে চকবাজারসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে চোখে পড়ে মুখরোচক ইফতারির বাহার, যা হরহামেশাই মন কেড়ে নিচ্ছে রোজাদারসহ সবার।

বর্তমানে চকবাজার ছাড়াও পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, সদরঘাট, বংশাল, গুলিস্তান, ওয়ারী, লক্ষ্মীবাজার, বাবুবাজার, আরমানিটোলা, সুরিটোলা, কাপ্তানবাজার, চানখাঁর পুল, আজিমপুর, টিপু সুলতান রোড, নারিন্দাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাহারি ইফতারি পাওয়া যায়। পুরান ঢাকার সব পাড়া-মহল্লায় হরেক রকম ইফতার পাওয়া গেলেও চকবাজারের ইফতার স্থানীয় রোজাদারদের জন্য সারাদিন যেন মুখিয়ে থাকা ভোজন বিলাস।

এই ঐতিহ্যবাহী ইফতার ঢাকার ভোজন রসিকদের জন্য আকর্ষণ ও দর্শনীয়ও বটে।

এসব এলাকায় গেলে হাঁকডাক শোনা যায়, ‘এটা চকবাজারের সেরা, বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙ্গায় বইরা লইয়া যায়’, ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শাহী সূতি কাবাব’। এমন হাঁক ডাকে বুঝা যায় এটা রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার। যে বিক্রেতা যত আয়োজন করে ডাকতে পারেন, সে দিকে চোখে পড়ে ক্রেতাদের ভীড়। তাই তো বরাবরের মতো এবারো ঐতিহ্যবাহী চকবাজারে ইফতার সামগ্রীর বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে।

চকবাজারে দুপুরের পরপর দোকানিরা নানা পদের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন। পুরান ঢাকার বিশেষ খাবার যেমন- কাবাব, মোগলাই পরোটা, হালিম, শাহি জিলাপি, রেজালা, গরুর আচার, মুরগির আচার, লেগ রোস্ট, বোরহানির মতো খাবারের স্বাদ মানুষকে টেনে নিয়ে আসছে প্রতি রমজানে। চকবাজারে ইফতার বাজার বসে শাহি মসজিদের সামনে রোডের দুই পাশজুড়ে। পুরান ঢাকার স্থানীয়রা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোজন বিলাসীরা এখানে আসেন পছন্দের ইফতার সামগ্রী কিনতে।

গাজীপুর থেকে বন্ধুদের সাথে ইফতার বাজারে এসেছেন জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ফেসবুকে ইউটিউবে চকবাজারের জনপ্রিয়তা দেখে বন্ধুদের সাথে নিয়ে এলাম ইফতার কিনতে। অনেকদিন পর সব বন্ধুরা একসাথে হয়েছি। তাই ইফতার পার্টির ইফতার আমরা এখান থেকে কিনলাম। আমরা চিকেন গ্রিল, ডিম চপ, কবুতর রোস্টসহ অন্যান্য খাবার কিনেছি।

বরিশালের লঞ্চের যাত্রী হারুন হাবীব এসেছেন চকবাজারে ইফতার কিনতে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে বরিশাল যাচ্ছি, ছেলে-মেয়েরা মোবাইলে চকবাজারের ইফতারের ভিডিও দেখে আবদার করেছে তারাও এখানকার ইফতার খাবে। তাই ওদের আবদার পূরণের জন্য যানজটে কষ্ট করেও এখানে থেকে ইফতার কিনলাম।

‘বড় বাপের পোলায় খায়’-এর বিক্রেতা বলেন, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার। এখানে মানুষ আসবেই।

এবার প্রতি পিস কিমা পরোটা ১১০ টাকা, টান পরোটা ৮০ টাকা, চিকেন সাসলিক ১১০ টাকা, অ্যারাবিয়ান কাবাব ৮০ টাকা, মুঠি কাবাব ৬০ টাকা, হালিম ৩০০ /৪০০/ ৮০০ টাকা বাটি, বটি কাবাব ১২০ টাকা, দই বড়া ২৫ টাকা, শাহী জিলাপি ৩০০ টাকা, সাধারণ জিলাপি ২০০ টাকা, চিকেন চাপ ১৫০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ টাকা প্রতি পিচ, খাসির লেগ রোস্ট ৮০০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে হরেক রকমের শরবত, ছোলা, পেয়াজু, বেগুনি, ফালুদা, আলুর চপসহ নানা রকমের ফল।

ইফতার বিক্রেতা তাওসিফ আহমেদ বলেন, গতবারের তুলনায় আমাদের এবার বিক্রি ভালো। আমরা সবসময় খাবারের গুণগত মান ঠিক রাখার চেষ্টা করি। তাই আমাদের ক্রেতারা বার বার আমাদের কাছে আসেন।

চকবাজারের বেশিরভাগ ইফতার বিক্রেতারা বংশপরম্পরায় এখানে ব্যবসা করছেন। কারো ব্যবসা এখন তৃতীয় প্রজন্ম, কারো ব্যবসা চতুর্থ প্রজন্মের বংশধররা পরিচালনা করছেন। কিছু কিছু বিক্রেতা আবার মৌসুমি ব্যবসায়ী। তারা শুধু রোজার মাসে এখানে ইফতারের দোকানগুলো পরিচালনা করেন।

সূত্র : বাসস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ