শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন

ভারত বাংলাদেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন আন্তর্জাতিক পানি আইন অনুযায়ী করতে হবে দাবি মুক্তিজোটের

রিপোটারের নাম / ৫০৫ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে মুক্তিজোটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (প্রচার)- মোঃ মামুন সিকদার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজামাল আমিরুল এ দাবি করেন।

তাঁরা বলেন কোনো রাষ্ট্র আপত্তি করলেই একটি অভিন্ন নদী থেকে উজানের দেশ মনের খুশিমতো পানি তুলে নিতে পারে কি না? নৈতিকভাবে একটি দেশের এই অধিকার নেই বলেই তো অধিকাংশ দেশের সম্মতিক্রমে একটি আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশন প্রণয়ন করা হয়েছে। সর্বোপরি গঙ্গা চুক্তি করার সময়ই বলা হয়েছিল যে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের অন্য সব অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রেও ন্যায্যতার ভিত্তিতে এ ধরনের পানিবণ্টন চুক্তি করা হবে।

অথচ গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে এই খরা মৌসুমে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা পাড়ের কৃষক ও বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এতে তিস্তায় জেগে ওঠা চরে পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ডাল ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী মনে করছেন, তিস্তার পানি নিয়ে ভারত দায়িত্বহীন আচরণ করছে। উল্লেখ্য, প্রতিবছর এসময় তিস্তায় কোনো পানিপ্রবাহ থাকেনা। এই আচরনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং মুক্তিজোট সতর্ক করে বলেছে যে আপনারা আমাদের অধীকার নিয়ে খেলবেন না।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারত তিস্তার সমাধান করেনি। সমতার ভিত্তিতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পানিবণ্টন চুক্তির উদাহরণ এই উপমহাদেশেই আছে। সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ১৯৬২ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি আছে। নানা রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক টানাপোড়েনের মধ্যেও দুই দেশ এই চুক্তিটি যথাযথভাবে মেনে চলছে। তাহলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের চুক্তি করতে বা মানতে বাঁধা কোথায়।

তিস্তা ব্যারাজ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকার বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচসুবিধা প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক সহায়তা করে থাকে। কিন্তু ভারত জলপাইগুড়ির গজলডোবায় আরেকটি ব্যারাজের মাধ্যমে তিস্তার প্রায় সব পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বাংলাদেশ অংশের ব্যারাজটি হুমকির মুখে পড়েছে।

এদিকে বেশ কয়েকবার গঙ্গার মতো তিস্তা নিয়েও চুক্তির পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৮৩ সালে তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারত, বাংলাদেশ ৩৬ শতাংশ আর ২৫ শতাংশ নদীর জন্য বিবেচনায় নিয়ে খসড়া চুক্তি প্রস্তাব করা হয়। ২০১১ সালে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ ভারত, বাংলাদেশ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ২০ শতাংশ পানি নদীর বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য বিবেচনায় নিয়ে নতুন প্রস্তাব আসে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিষয়টি ঝুলে গিয়েছে।

তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, যে ভারতের হাইকোর্ট ২০১৭ সালে নদীকে জীবন্ত মানুষের অধিকার দিয়ে আইন পাশ করে সেই রাষ্ট্র কিভাবে উজানে নদীতে বাঁধ দিয়ে নিম্নঅঞ্চলের অববাহিকাকে শুকিয়ে ফেলে। এটা কি তাদের করা আইনের লংঘন নয়।

তাই শুধু তিস্তা নয় সকল নদীর পানি বন্টন করতে হবে এবং তা আমাদের যথাযথভাবে দিতে হবে।

প্রসঙ্গতঃ দুই বা ততোধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদীর পানিবণ্টন নিয়ে জাতিসংঘের কনভেশনটি হচ্ছে, দ্য কনভেনশন অন দ্য ল অব নন-ন্যাভিগেশনাল ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকোর্সেস, ১৯৯৭। দ্বিপক্ষীয় বা আঞ্চলিক পানি চুক্তির ক্ষেত্রেও এই কনভেনশনটিকে ভিত্তি হিসেবে ধরার কথা বলা আছে। কিন্তু বাংলাদেশ বা ভারত—কেউই এই আইনটিতে স্বাক্ষর করেনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ