মানব স্বত্বা দুটি ভাগে ভাগ বিভক্ত একটি হল শরীরিক ও আপরটি মানষিক। শরীরের প্রয়োজনে খাবার পানি ঔষধ থাকলেও মানষিক অবসাদ ও অনান্য সমস্যা থেকে বাঁচতে মানুষ যুগে যুগে নানা বিনোদন খুঁজছে। সেখান থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তথা নাটক,গান কবিতা এগুলো এসেছে। মানষিক প্রশান্তি পেতে শিল্পী ছবি একেছেন, কবি লিখেছেন কবিতা। আর এগুলো প্রকাশ করছে সমকালীন জীবনযাত্রার কথা। একটি জাতি স্বত্বার ইতিহাস, ঐতিহ্য ক্রমবিকাশ, নীতি, আর্দশ সব কিছু। আমরা আমাদের প্রাচীন লেখাগুলোতে আমাদের বাঙালীর ইতিহাস জানি, জানি আমাদের বোধ বা মুল্যবোধ সম্পর্কে। আমাদের বাঙালীত্বের বোধ। আমাদের আপদে বিপদে পরস্পরের সহযোগিতার বোধ। কিন্তু আজ সেই বোধ কেমন জানি নচিকেতার একটি গানের লাইন হয়ে গেছে । “প্রতিদিন চুরি যায় মুল্যবোধের সোনা, আমাদের স্বপ্ন আমাদের চেতনা”। সারাবিশ্ব যখন করোনা মহামারী ও নানা প্রাকৃতির দুর্যোগে আক্রান্ত ঠিক তখনি আর একটা মহামারী বয়ে চলেছে আমাদের সাংস্কৃতির উপর।এই মহামারী আমাদের অস্তিত্বের সংকট ঘটাচ্ছে । এই মহামারীর দৃশ্যত্ব বলি মডেল, নায়িকা রা আর অদৃশ্য বলী কিছু স্বপ্নবাজ মানুষ যারা স্বপ্ন পুরোন করতে গিয়ে কখন যে বিত্তশালের ব্রকার হয়ে গেছে তারা তা জানেনা। একটি দুর্বৃত্তের পঁচা নর্দমার পড়ে কষ্টে শ্বাস নিচ্ছে।
মিডিয়া বা সাংস্কৃতিক সমস্যাটা সবাই জানি কিন্তু সমাধান জানি না। আমি একটু সমস্যাটির গভীরতা নিয়ে আলোচনা করি। এখানে প্রধান সমস্যা আমাদের সাংস্কৃতিক পতন কে আমি দায়ী করতে চাই। আমাদের ছিল হাজার বছরের সাংস্কৃতিক যে ঐতিহ্য। ছিল আমাদের ছিল পারস্পরিক সহমর্মিতা বোধ। কিন্তু আত্নমর্যাদা সম্পন্ন বাঙালী জাতি তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারিয়ে আত্নমর্যাদাহীণ জাতিতে পরিণত আজ। সাংস্কৃতিক মুল্যবোধ হারানো একটি জাতি হঠাৎ অর্থ বৈভব এ ডুবে গেল। শিল্প বোধ সম্পন্ন না এমন মানুষ মিডিয়াতে অর্থ লগ্নি করতে লাগলো। ধীরে ধীরে বাঙালী জাতি তার স্বকীয়তা হারিয়ে বিদেশি সাংস্কৃতিক ধজা ধারি হয়ে গেল। তাইতো আজ মডেল, নায়িকারা শিল্পপতিদের কাছে লাঞ্ছিত হচ্ছে।
বলা হয় নায়িকারা চরিত্রহীন। তো প্রশ্ন নায়িকাদের কে চরিত্রহীন করলো কারা। কাদের ক্ষতি বেশি সাধু সাবধান আমাদের সাংস্কৃতিক বির্পযয় টা শুরু হয়ে গেছে আপাতত নায়িকা মডেলদের লাঞ্ছিনা আপনারা দেখতেছেন। কিন্তু মিডিয়ার বা সাংস্কৃতিক সাথে জড়িত ব্যাক্তিরাও এর বাইরে নয়। আমাদের দেশের পরিচালকগন বাধ্য হচ্ছে অনেক বিরূপ পরিস্থিতিকে মেনে নিতে। একটি সুস্থ দেশজ সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে না উঠা এর একটি কারন। আগে আমাদের ছিল গানের দল যাত্রার দল পাড়ার নাটকের দল। এগুলোর মাধ্যমে আমাদের বিনোদন হত ও একটি নৈতিক উৎকর্ষ সাধিত হতো। কালের পরিক্রমায় সেগুলোর বিলুপ্তি ঘটেছে আর বিনোদনের মাত্রার সাথে যুক্ত হয়েছে অসুস্থ ধারা।
এক সময়ে ত্রাস ছাত্রদল ও পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির নেতা গোলাম ফারুক অভির দ্বারা তৎকালীন মডেল তিন্নি হত্যার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় মডেল হত্যার ইতিহাস । একটি সুস্থ স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক বিকাশ না থাকলে চলবে নোংড়ামি। বাঙালী তার মৌলিকত্ব হারাবে। ঐ পরিমনিরা বারবার নাসিরদের কাছে প্রতারিত হবে। দেশে চলবে খুন গুম হত্যা রাহাজানি। তাই আবারো গ্রাম ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা দরকার।
পাড়ায় পাড়ার নাটক হোক, গান হোক চলুক সামাজিক যাত্রাপালা।না হলে বিদেশি সংস্কৃতি আর টিকটক, লাইকি আমাদের ঘড়িতে টিক টিক ১২ টা বাজিয়ে দিবে।সরকারকে তাই বাঙালী সংস্কৃতি বাঁচাতে সারা দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতপ্রায় থিয়েটার, গানের দল, যাত্রার দলগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এরা বাঁচলে অপসাংস্কৃতি দুর হবে । হাজার বছরের বাঙালী সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটুক না হলে আমরা হারাবো আমাদের জাতি স্বত্বার মৌলিকত্ব। সেই মৌলিকত্ব য়ার জন্য জীবন দিয়েছেন ৩০ লক্ষ শহীদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
বেদুইন হায়দার লিও ( নাট্যকার ও সাংস্কৃতিক কর্মী)