সুদূর মার্কিন মুল্লুক থেকে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে বিমানে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছে ব্রাহমা প্রজাতির ১৮টি গরু। টানা ১৮-২০ ঘণ্টার ভ্রমণের ধকল সইতে না পেরে গত সোমবার সকালে পৌঁছানোর পর পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে একটি গরু। জীবত থাকা ১৭টি গরুরও মালিক খুঁজে পাচ্ছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তাই একরকম বিপাকেই রয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। আপাত সেগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হাতে তুলে দিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছেন। ঢাকা কাস্টমস হাউস কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী গরু, পশুপাখি অথবা পচনশীল পণ্য বিদেশ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি আমদানি করলে সেগুলো দেশে পৌঁছানোর আগেই কাস্টমসসহ বিমানবন্দরের প্রশাসনিক সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু ওই ১৮টি গরু আমদানির বিষয়ে কোনো আবেদন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পায়নি। তা ছাড়া বাংলাদেশে ব্রাহমা গরু আমদানির অনুমতি নেই। বিশেষ প্রয়োজনে কেউ আনলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি লাগে।’ কাস্টমস কমিশনার বলেন, ‘বিমানের ভেতরে
তল্লাশি চালিয়ে সাদেক এগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি যদিও গরুর মালিকানার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। তবে যে প্রতিষ্ঠানই গরু আনুক না কেন, এ ক্ষেত্রে একটি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তারা ধারণা করেছিল- মালিকানা না পাওয়া গেলে গরুগুলো হয়তো নিলামে ওঠানো হবে। তখন তারা গরুগুলো নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কার্গো বিমানের ভেতরে যে কাগজ পাওয়া গেছে, তাতে ১৮টি গরুর ক্রয়মূল্যে দেখানো হয় ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে প্রতিটি ব্রাহমা জাতের গরুর দাম ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য কমবেশি তিন কোটি টাকা।’
জানা যায়, গরুগুলো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরেই এর মালিকদের খোঁজ করা হয়। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও আসল মালিকদের খোঁজ মেলেনি। মূল্যবান গরুগুলো আমদানি ও মালিকানা দাবি না করার পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা, তা নিয়েই এখন জোর আলোচনা হচ্ছে বিমানবন্দরে। মালিকানা না পাওয়ায় সাময়িক সংরক্ষণের জন্য গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী রফিকুজ্জামান ও ভেটেরিনারি প্যাথলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুকের কাছে হস্তান্তর করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর আগে অবলা প্রাণিগুলোর স্বাস্থ্যপরীক্ষাসহ আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। বর্তমানে ১৭টি গরুর ঠাঁই হয়েছে সাভার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে।