ঝিনাইদহে আধুনিকতার ছোয়ায় গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি
সাইফুল ইসলামঃ
সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহে সাগান্না, সাধুহাটি ও মধুহাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম বাংলার এক সময়ের খাদ্যদ্রবাদি মাড়াইয়ের অন্যতম মাধ্যম ঢেঁকি এখন শুধুই স্মৃতি।
কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী টেঁকি। এক সময়ের কৃষাণ-কৃষাণিদের ভালো মানের চাল তৈরির প্রধান মাধ্যম ছিলো ঢেঁকি। গ্রামেগঞ্জে এখন পুরোপুরি লেগেছে আধুনিকতার ঢেউ। কালের বিবর্তনে পুরোপুরি হারিয়ে গেল ঢেঁকির ছন্দময় শব্দ।
গ্রামেগঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় এক সময় ঢেঁকি দিয়ে চাল তৈরি, চিড়া ভাঙা, আটা, পায়েসের চালের গুঁড়ো, খির তৈরির চাল বানানোর সেই ঢেঁকি– আজ হার মেনেছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনের কাছে। ধান ভানা, চাল গুঁড়ো করা, বড়ি তৈরি করা, আটা তৈরি চালের গুঁড়াসহ ঢেঁকির যাবতীয় কাজ এখন করছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনে। ঢেঁকি নিয়ে এক সময় জনপ্রিয় গান রচিত হয়েছিল।
‘ও বউ চাল ভাঙ্গেরে, ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, নতুন চাল ভাঙে হেলিয়া দুলিয়া, ও বউ চাল ভাঙেরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া’ এ রকম গান আর শোনা যায় না। ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না, সাধুহাটি ও মধুহাটি ইউনিয়ন থেকে এখন হারিয়ে গেছে। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন যেন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না। এক সময় ঢেঁকি ছিল এ উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের চাল ও চালের গুঁড়া তৈরির একমাত্র মাধ্যম। বধূঁরা ঢেঁকিতে চাল ভাঙতো গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার ঢেঁকি হারিয়ে গেছে। এখন ঢেঁকির সেই ধুপধাপ শব্দ আর শোনা যায় না।
ঝিনাইদহের সদর উপজেলার ৩ নং সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল-মামুন এর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি “দৈনিক অন্যদিগন্ত” কে জানান, সচারাচর ৪/৫ বছর পূর্বেও পরিবারের কৃষাণীরা সে সময় দৈনন্দিন ধান, গম ও জব ভাঙার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন। পাশাপাশি চিড়া তৈরির মত কঠিন কাজও ওই ঢেঁকিতেই করা হতো। বিশেষ করে সবে বরাত, ঈদ, পূজা, নবান্ন উৎসব, হিন্দুদের পূজা-পার্বন এবং পৌষ পার্বণসহ বিশেষ বিশেষ দিনে পিঠা-পুলি খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতেই ঢেঁকিতে চালের আটা তৈরি করা হতো।কিন্তু আধুনিকতা আর বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন ধান-গম ভাঙা যন্ত্র আবিষ্কারের কারণে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে গেছে ঢেঁকি।