প্রতিবছর শীত মৌসুমে সাইবেরিয়া ও হিমালয় অঞ্চল থেকে দেশে আসে নানা প্রজাতির পাখি। কুমিল্লাও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী বৈচিত্রের প্রতি ভালোবাসার দরুণ এসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শৌখিন পাখিপ্রেমী ফটোগ্রাফাররা এদের ফ্রেমবন্দি করতে ছুটে বেড়ান। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে কারো কারো ক্যামেরায় ধরা পড়ে নানা দুর্লভ প্রজাতির পাখির। এরই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার বুকচিরে বয়ে চলা নদী গোমতির তীরবর্তী গ্রামগুলোতে পাখির খোঁজে ছুটে বেড়ান একদল তরুণ ফটোগ্রাফার। তাদের ক্যামেরায় ধরা দিলো বিরল অতিথি পাখি চাইনিজ চুনীকণ্ঠি!
মূলত অন্য এক সুলভ প্রজাতির সাইবেরিয়ান চুনীকণ্ঠির খোঁজে বের হয়ে তারা এর দেখা পান। প্রথম দেখাতেই সাইবেরিয়ান প্রজাতি হতে কিছুটা পৃথক বলে মনে হলে পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিলে এর পরিচয় নিশ্চিত হয়।
অতিথি পাখিদের মধ্যে সাইবেরীয় চুনীকণ্ঠি বেশ সুলভ এবং দেশের প্রায় সব প্রান্তে দেখা মিলে। কিন্তু চাইনিজ চুনীকণ্ঠির দেখা পাওয়া বেশ ভাগ্যের ব্যাপার।
এই প্রজাতির পাখিদের গলার কাছে উজ্জ্বল লাল বনের অংশটি দেখলেই এদের নামকরণের সার্থকতা বোঝা যায়। এর মধ্যে চাইনিজ প্রজাতিটি সৌন্দর্যে আরো একধাপ এগিয়ে। এর কণ্ঠের লাল বর্ণকে ঘিরে রয়েছে কাজল-কালো বক্ষাংশ। সিলেটের কিছু অঞ্চলে গুটিকয়েক এ পাখির দেখা মিললেও দেশের এ প্রান্তে এটিই প্রথম ফটোগ্রাফিক রেকর্ড।
এ বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ তরিকুল ইসলাম তরু বলেন, করোনার কারণে চেনা পৃথিবীটা বিরাট পরিবর্তন হয়ে গেছে। পাখির সাথে মানুষের দূরত্ব কমে গেছে। আমি সকালে হাঁটতে গেলে দেখতাম, একটা দোয়েল আমার কাছ থেকে দূরত্ব রাখতো দশ বারো ফিট, একটা চড়ুই দূরত্ব রাখতো সাত-আট ফিট কিংবা শালিক দূরত্ব রাখতো দশ ফিট, কাক রাখত পাঁচ ফিট। এখন ওই দূরত্ব কমতে কমতে ওই দূরত্ব একেবারেই কমে গেছে। এখন হাঁটতে গিয়ে দেখি দোয়েল, শালিক, চড়ুই দেড় ফিট দূরত্বে বসে আছে, উড়লও দেয় না। যেহেতু মানুষ কম, কেউ তাদের তাড়াও দিচ্ছে না। তাই পাখিও স্বভাব বদলে ফেলেছে। ধীরে ধীরে মানুষের সাথে দূরত্বটা কমিয়ে ফেলেছে। এটা আনন্দের, খুবই আনন্দের ব্যাপার।
সূত্র : বাসস