গত ২১/০৭/২০২৩ তারিখ রমনায় বিকাল ৩ টা থেকেই শুরু হয় একটি ব্যাতিক্রম ধর্মী বই পড়ার উৎসব। বই পড়ুয়ারা নিজেরাই শতরঞ্জি বা বিছানার চাদর বিছিয়ে, কেউ বসে কেউ শুয়ে বই পড়া শুরু করেন। শুধু তাই নয় সাথে নিয়ে আসে ফলমূল ও খাবার। যেন একদম একান্ত সময়ে নিজেদের পছন্দের বইটি পড়ার জন্যে উপযুক্ত মুহুর্ত। ভলান্টিয়ার অপারচুনিটিস আয়োজিত বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে “সাইলেন্ট বুক রিডিং” নামক একটি উদ্যোগ।
বই পড়ুয়াদের কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই, শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী সকলের ই আনাগোনা লেগেই ছিলো। কেউ সারা সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করতে বই নিয়ে রমনার বিশুদ্ধ বাতাস অনুভব করতে চলে এসেছিলেন আবার কেউবা কখনো বই পড়েনি তবু বই পড়ুয়াদের পরিবেশে নিজেকে একটু আগ্রহী করতেও বই নিয়ে হাজির হয়েছিলো।
একজন শিশু বই পড়ুয়া বলেন, ” আমি আমার মিস এর সাথে এসেছি,আমি আরো আসতে চাই,আজকে আমার সবার সাথে বই পড়তে খুব ভালো লেগেছে।”
কেউ পড়ছেন বিভূতিভূষণ কেউবা সমরেশ আবার কেউ পড়ছেন পাওলো কোয়েলহো বা কোলেন হোভার আবার কেউ নিয়ে এসেছিলেন ইসলামিক বই।
একজন চাকুরীজীবি জানান,”কর্মব্যাস্ততার চাপে ভুলেই গেছিলাম আমার এককালে রোজ সপ্তাহে দুটো বই শেষ করার অভ্যাস ছিলো,হারিয়ে ফেলেছি সময়গুলো, তাই তো ছুটে আসা।”
বেশ কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ায় সাইলেন্ট বুক রিডিং ইনিসিয়েটিভ বেশ ভালো আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই বই পড়ার প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পার্কে বা খোলা আকাশের নিচে বই পড়া যেন হাস্যরসের মাধ্যমেই সাড়া পায়। তবে আজ রমনার নতুন রূপ সৃষ্টি করে ভলান্টিয়ার অপারচুনিটিস।
ভলান্টিয়ার অপারচুনিটিস এর ফাউন্ডার মিথুন দাস কাব্য জানান,” শুধু একদিন কে কেন্দ্র করে নয়, বরং নিয়মিত এই ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।” শুধু বই পড়া নয় পরিবেশ বান্ধব মনোভাব তৈরি করতে নিয়ে নিয়ে আসেন ইকোফ্রেন্ডলি ডাস্টবিন, সকলকে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতেও উৎসাহিত করেন তিনি।
আলো যেমন জাগতিক নিয়মে অন্ধকার দূর করে সব কিছু মূর্ত করে , তেমনি বই মানুষের মনের ভেতরে জ্ঞানের আলো এনে যাবতীয় অন্ধকারকে দূর করে চেতনার আলোকে সবকিছুকে উদ্ভাসিত করে দেখায়। আলো শুধু ভৌগোলিক ভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে। আর বই অতীত থেকে ভবিষ্যৎ , নিকট থেকে দূরে , প্রান্ত থেকে অন্তে এমনকি যুগ থেকে যুগান্তরে জ্ঞানের আলোকে পৌঁছে দিতে পারে । শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হল আত্মশিখন ।
তাই সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, ”বই কিনে কেউ কোনদিন দেউলিয়া হয় না।“
আজকের বই পড়ার উদ্যোগ যেন শুধু বই পড়াকে কেন্দ্র করে নয় বরং এর সাথে মিশে ছিলো ক্লান্তি শেষে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার যজ্ঞ, পুরোনো দিনের অভ্যাসকে একটু খানি নতুন করে অনুভব করা, আর প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে নিজের জীবনের নতুন গল্প রচনা করা। ভলান্টিয়ার অপারচুনিটিস এই উদ্যোগের জন্যে সত্যিই প্রশংসার দাবিদার