মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজামাল আমিরুল স্বাক্ষরিত চিঠিতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন থেকে নির্দিষ্ট কৃত ইমেইলে ১২টি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ৪ঠা নভেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে মুক্তিজোটের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য (প্রচার) শরিফ মোঃ বেদুইন হায়দার লিও স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান হয়।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে মুক্তিজোটের ১২ প্রস্তাবঃ
১. নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধান-এর ১১৮ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিধি কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে পাশ করতে হবে।
২. কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘জাতীয় পরিষদ’ গঠন করে, জাতীয় পরিষদে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের বিধি-বিধান সংস্কার করতে হবে।
জাতীয় পরিষদ গঠনঃ কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে জাতীয় পরিষদ গঠন করতে হবে। জাতীয় পরিষদের সাধারণ কর্ম নির্বাহের জন্য আহ্বায়ক হিসেবে নির্দিষ্ট থাকবেন পদাধিকার বলে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সদস্য হিসেবে অন্যান্য কমিশনারগণ। আর উক্ত জাতীয় পরিষদের প্রধান তথা চূড়ান্ত নির্দেশনাদানকারী কর্তৃত্বে থাকবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
৩. নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় নির্বাচনকালীন সময়ে তথা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে “স্বরাষ্ট্র এবং জনপ্রশাসন” মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেয়ার সুনির্দিষ্ট আইন পাশ করতে হবে। কারণ নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশন মূখ্যতঃ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে সরকারমুখীনতায় ঝুলে থাকে। আমরা দেখেছি বিগত নির্বাচন কমিশন ডিসিদের কাছে সহায়তা চাইছে এবং তা দেওয়ার জন্যও ডিসিরা কথা দিচ্ছেন। এরকম সহায়তার কথা বলছি না। মুক্তিজোট দাবী করছে— স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনতে হবে; নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে আইন সংশোধন করতে হবে যাতে উক্ত মন্ত্রণালয় অধীভুক্ত সকল কর্মচারী কর্মকর্তা নির্বাচনকালীন সময় নির্বাচন কমিশনের আদেশ নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকে।
৪. যেহেতু নির্বাচন করে নির্বাচন কমিশন তাই জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।
৫. সকল নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট প্রথা বাতিল করতে হবে। বর্তমানে দেশে প্রায় অর্ধশত দল নিবন্ধিত। এছাড়াও অনেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে যদি একটি কেন্দ্রে ৫০ জন প্রার্থী থাকে এবং তাদের ৫০ জন পোলিং এজেন্ট থাকে তাহলে যেমন বিশৃঙ্খলা হবে তেমন ভোটারদের প্রভাবিত করতে এবং ভোট সেন্টার থেকে ব্যালট বাক্সে জাল ভোট দিতে আর কিছুই লাগে না। তাই এই প্রথা বাতিল করতে হবে।
৬. নূন্যতম একটি আসনে ৩ জন প্রতিদ্বন্দি থাকতে হবে এবং প্রতিটি আসনে ৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হলেই কেবল ভোট বৈধতা পাবে অন্যথায় পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।
৭. প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে
৮. প্রযুক্তি প্রসঙ্গে জনগণকে সচেতন করে তোলার প্রশ্নে পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ই-ভোটিং চালুর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৯. জাতীয় নির্বাচনের সময় ৩ দিন ছুটি প্রদান করতে হবে।
১০. নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যারা আবেদন করবেন (এমপি, মন্ত্রী, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি), তাদের ফার্স্ট ব্লাড (বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান) এর কেউ বাংলাদেশের বাইরে অন্য দেশের নাগরিকত্ব থাকলে উক্ত আবেদন অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে, এ আইন আরপিওতে যুক্ত করতে হবে।
১১. সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থায় নির্বাচন করতে হবে। কোন দল নূন্যতম ১% ভোট পেলে ৩টি আসন পাওয়ার যোগ্য হবে । সংসদীয় আসন ৩৩০ এ উন্নীত করতে হবে, এছাড়াও সংরক্ষিত আসন থাকতে হবে ২০ টি যার ১০ জন নারী প্রতিনিধি, ১ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ২ জন কৃষক প্রতিনিধি, ১ জন শ্রমিক প্রতিনিধি, ১ জন সাংস্কৃতিক কর্মী, ১ জন মানবাধিকার কর্মী, ১ জন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির প্রতিনিধি, ১ জন তৃত্বীয় লিঙ্গ, ১ জন গার্মেন্টস কর্মীদের প্রতিনিধি, ১ জন ক্রীড়া প্রতিনিধি ।
১২. নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে কার্যকরী আইন প্রণয়নঃ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার পূর্বশর্ত ভোটারদের প্রভাবমুক্ত ভোটদানের পরিবেশ নিশ্চিত করা। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তার জন্যে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন করতে হবে।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন বুকে নিয়ে ৫২ থেকে ৭১ হয়ে নুর হোসেন তথা আজকের আবু সাঈদ-মুগ্ধরা মরে না তাঁরা মুক্তির প্রেরণা হয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকে। আজকের আধুনিক বাংলাদেশ তাঁদের স্বপ্নেরই বিনির্মাণ হবে এই প্রত্যাশাও করেন তাঁরা।