ছেলে আলতাফ হোসেনের (৩৫) মৃত্যুতে মাতম করছিলেন মা–বাবা ও স্বজনেরা। এরই মধ্যে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁর লাশ নেওয়া হচ্ছিল সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের বাড়িতে। ওই লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে হঠাৎ প্রসববেদনা শুরু হয় ছেলের বউ রহিমা খাতুনের। পরে সেখানেই কন্যাসন্তান প্রসব করেন তিনি।
মারা যাওয়া আলতাফ হোসেন প্রতাপনগর গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে। আলতাফ এলাকায় শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। তাঁর এক মেয়ে ও এক ছেলে। ৯ বছর বয়সী মেয়ে তাহমিনা স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। ছয় বছরের ছেলে সিয়াম স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।আলতাফের বাবা শামছুর রহমান বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ঢাকার একটি ইটভাটায় কাজ করতে যান আলতাফ। দুই মাস কাজ করে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর ছেলে। গত ৩০ নভেম্বর বাড়িতে ফিরে আসেন। অসুস্থতা বাড়লে ২ ডিসেম্বর তাঁকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আলতাফ মারা যান।স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর পর গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আলতাফ হোসেনের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ির পথে ফিরছিলেন রহিমা খাতুন ও অন্য স্বজনেরা। অ্যাম্বুলেন্সটি আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা এলাকায় পৌঁছালে রাত ১০টার দিকে রহিমা খাতুনের প্রসবব্যথা শুরু হয়। একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই তিনি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে গ্রামের বাড়ি প্রতাপনগরে ফেরেন তাঁরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে প্রতাপনগর এবিএস ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে মরদেহের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
রহিমা খাতুন বলেন, চিকিৎসক চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে তাঁর সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের কথা জানিয়েছিলেন। এরই মধ্যে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি অ্যাম্বুলেন্সে আহাজারি করতে করতে ফিরছিলেন। হঠাৎ তাঁর প্রসববেদনা শুরু হয়। কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তিনি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। মেয়েটির নাম রেখেছেন জান্নাতুল। সে এখন সুস্থ আছে। জান্নাতুল বাবার আদর কী, তা জানবে না—এ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী বলেন, পরিবারটি আলতাফের উপার্জনে চলছিল। হঠাৎ তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি বিপদের মুখে পড়ল
“প্রথম আলো”