বাকপ্রতিবন্ধী চন্দনা খাতুন। স্বামীকে খুঁজতে বাড়ি থেকে বের হন ২০০৫ সালের দিকে। সেই থেকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিলা না তাকে। কেটে গেল ১৮ বছর। পরিবারের লোকজন ধরে নিয়েছিল মারা গেছে চন্দনা খাতুন। ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নের দেবী নগর গ্রামের মৃত মজিবর শেখের স্ত্রী তিনি। এর আগে মাকে খুঁজতে পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ, বিভিন্ন থানায় জিডি এমনকি কবিরাজের কাছে পর্যন্ত গেছেন পরিবারের সদস্যরা। কোথাও সন্ধান মেলেনি চন্দনার।
গল্প নয় সত্যি। ২০২৪ সালের প্রথম দিন। হঠাৎ দেখা। একমাত্র ছেলে ফরিদ শেখ এক আত্মীয়কে ডাক্তার দেখাতে যশোর রেল স্টেশনের কাছে যান। দেখেন রেলস্টেশনে হাঁটা চলা করছেন তার মা চন্দনা। দৌড়ে যান মায়ের কাছে। মা সন্তানকে চিনতে পেরে বুকে টেনে নেন। মাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন ফরিদ। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। নারী-পুরুষ-শিশুরা ছুটে আসেন। সবাই চন্দনাকে দেখে অবাক হন। কথা বলতে না পারলেও চোখের ভাষা দিয়ে কাছে টেনে নেন প্রতিবেশী-স্বজনদের। কেও কেও চন্দনাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ফরিদ শেখ বলেন, যাদের মা-বাবা আছে তারা বুঝতে পারেন। এতদিন সেই সুখ-আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিলাম। কষ্ট বুকে চেপে ধরে ছিলাম। এখন অনেক হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে সব কষ্ট নেমে গেছে।
মেয়ে ঝর্ণা খাতুন বলেন, মায়ের বাড়ি আসার খবর জানাজানি হলে গ্রামবাসী একনজর দেখতে ভিড় করেন ভাইয়ের বাড়িতে। চান্দনা খাতুনকে কেমন আছেন জানতে চাইলে, মাথা নেড়ে জবাব দেন- খুব ভালো আছেন। হাত নেড়ে জানান, আর বাড়ি ছেড়ে যাবেন না। দুই সন্তানকে বুকে ধরে রেখেছেন তিনি। চোখের দৃষ্টি কমেছে। মুখে ভাষা নেই। তবুও চন্দনার চোখে দিয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
যুগান্তর