বাজেটে সংকট মুক্তির কোন ভাবনা নেই এমন কি এ বাজেটে আরও চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের উপর বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান-আবু লায়েস মুন্না।
তিনি আরও বলেন আমরা বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করার জন্য মুখস্ত করি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাসক হল সম্রাট অশোক। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে আমরা কয়জন জানি বা জানতে চেষ্টা করি যে অশোকের রাষ্ট্র পরিচালনায় আর্থিক নীতি কি ছিল। আলেকজান্ডারের রাষ্ট্র নীতি বা তার গুরু এরিস্টোটলের কথা জানলেও কয়জন জানি যে আমাদের চাণক্য ছিল অশোকের গুরু ও তার একটি আর্থিক নীতিও ছিল। যেখানে তিনি বলেন রাজা তার প্রজাদের কাছ থেকে কর নিবে এমনভাবে যেমন প্রজাপতি/মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। যার ফলে ফুলের পরাগায়ন বৃদ্ধি হয়।
৮ই জুন ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানান। মুক্তিজোটের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজামাল আমিরুল স্বাক্ষরিত লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানান আমাদের দেশে যখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের উত্তাপে জ্বলছে সধারণ মানুষ, তখন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সবাইকে বড় অঙ্কের বাজেটের স্বপ্নে ভাসালেন। তিনি যখন স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার আর স্মার্ট সমাজব্যবস্থার কথা বলছেন; তখন একজন স্বল্প আয়ের নাগরিককে বাজারে গিয়ে ১৬০ টাকায় এক ডজন ডিম কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ ডলার আর মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশের ঘরে রাখার আশা জাগাচ্ছেন, তখনো সীমিত আয়ের একজন ভোক্তাকে চালচুলো ঠিক রাখতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন একজন সাধারণ মানুষ যখন ১০ শতাংশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে মরিয়া, তখন অর্থমন্ত্রীর তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দিচ্ছেন। এমনকি মোবাইল ফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে অসংখ্য নিত্যপণ্য, পণ্যের কাঁচামালে শুল্ক-কর বসানো হয়েছে। পার্কে ভ্রমণ থেকে জুস-বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যক পণ্য ও সেবায় বসছে করের খড়্গ। এছাড়াও বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট আরোপের পাাশপাশি আইসক্রিম, বৈদুতিক বাতি, ফ্রিজ-এসি, পানির ফিল্টার, সুইস-সকেট, মোটরসাইকেল, কাজুবাদামসহ বহু পণ্যে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে এ বাজেটে। মোবাইল ফোনের সিম কার্ড, ইন্টারনেট ও ফোনে এসবের প্রভাব সরাসরি পণ্যের দামে পড়বে। পণ্যে যতটুকু শুল্ক-কর বসে, দাম বাড়ে তার চেয়ে বেশি হারে। বাড়তি দামের সরাসরি প্রভাব পড়ে ভোক্তার ঘাড়ে। ব্যাংকে টাকা রাখলে বাড়তি আবগারি শুল্ক দিতে হবে। এর প্রভাব কমবেশি আমানতকারী সব গ্রাহকের ওপরই পড়বে।
হিসাব বিজ্ঞানের জনক লুকা প্যাসিওলির পিছনে লুকানোর নীতির উপর ভর করে স্বপ্ন পুরণের সক্ষমতা কম বলেই কি বেশি ধার-কর্জ আর কর-রাজস্বে ভর করে বেশি খরচের বাজেট সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ রকম একটি বাজেটই (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার) গত ৬ই জুন বৃহস্পতিবার তিনি জাতির সামনে প্রস্তাব করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ে ২০ লাখ টাকার বেশি আয় করলেই ৩০ শতাংশ সর্বোচ্চ কর দেওয়ার কথা বলেছেন। এর ফলে মোটামুটি মধ্য স্তরের চাকরিজীবীকেও এ করের স্তরে পড়ে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। অথচ কালো টাকা সাদা করার জন্য কর দিতে হবে মাত্র ১৫ শতাংশ এতে প্রমান হয় এ বাজেট সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব না করে একটি সুনির্দিষ্ট শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব করে। যা আধুনিক অর্থনীতির জনক পল অ্যান্থনি স্যামুয়েলসনের নীতিরই প্রতি ফলন যেখানে বলা হয় গ্লাস ভরার পর যেটুকু উপচে পড়বে তাই অন্যরা পাবে অর্থাৎ একজনের পেট ভরার পর যেটুকু উচ্ছিষ্ট থাকবে তা অন্যরা খাবে। অর্থাৎ এ বাজেট যেন জোনাথন সুইফটের ‘এ মডেস্ট প্রোপোজাল’ এরই নামান্তর।
অথচ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমান পৃথিবীর অর্থনীতিতে ‘ইকোলজি বেজড ইকোনোমিকস’ একটি আলোচ্য প্রসঙ্গ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ‘ইকোলজি বেজড ইকোনোমিকস’ নীতির কোন উল্লেখ নেই বলেও মন্তব্য করেন আবু লায়েস মুন্না। তিনি মুক্তিজোটের পক্ষ থেকে দাবী করেন যেহেতু আমাদের দেশ শুধু কৃষি প্রধানই নয় নদী মাতৃক দেশ তাই কৃষি, শিক্ষা, বস্ত্র ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য নৌ ও সুমদ্র বন্দরগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট করতে হবে। যাতে বাজেটের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়।