শিরোনাম
শুরু হতে পারে শৈত্যপ্রবাহ!! বিজয়ের এই মহান দিনে পৃথিবীর সব মানুষকে মুক্তিজোটের শুভেচ্ছা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সরকারী ছুটির দাবি মুক্তিজোটের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে মুক্তিজোটের অভিনন্দন বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মুক্তিজোট সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা ফ্যাসিস্ট নির্মুলে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীভুত-কেন্দ্রীকরণ করার কথা বলেন মুক্তিজোটের সাধারণ সম্পাদক কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্যুর (Kanchenjunga Tour) ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছে মুক্তিজোট নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে মুক্তিজোটের ১২ প্রস্তাব
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন

ক্রমশ লাল হচ্ছে কাঁটাতার

শরীফ মোঃ বেদুইন হায়দার লিও / ৭৩ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ক্রমশ লাল হচ্ছে কাঁটাতার

সীমান্তে হত্যা থামছেই না। বাংলাদেশকে যেন প্রতিবেশী হিসাবে কিম্বা আন্তর্জাতিক সিমান্ত আইন কোনটার তোয়াক্কাই করছে না ভারত। মুলতঃ গত ১৬/১৭ বছর বিগত আওয়ামী সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি ভারতকে আরও বেপরোয়া করছে। কাঁটাতারে ফেলানীর ঝুলে থাকা কিম্বা মাত্র ২ দিন আগে স্বর্ণা দাসের মৃত্যু আবারও ভাবাচ্ছে। বড় প্রতিবেশী বলে আমাদেরকে ক্রমাগত শোষণ নির্যাতন করে আসছে সেই স্বাধীনতার পর থেকেই। আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে এগুলোর বিরুদ্ধে অন্তত সেচ্চার হতে হবে।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর বেলা ফেলানীকে হত্যাকরা হয়। ফেলানী হত্যাকাণ্ডের পর তার লাশ দীর্ঘ সময় ঝুলে ছিল কাঁটাতারের বেড়ায়।এক কিশোরীর লাল রক্তে কাটাতার লাল হয়ে উঠে। কিশোরী ফেলানীর লাশ প্রবল আলোড়ন তুলেছিল দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। কিন্তু এ রকম আলোড়নের পরও শাস্তি হয়নি ফেলানীকে হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যের। বিএসএফের আদালত তাঁকে বেকসুর খালাস দেন। এরপর মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে গড়ালেও বিচার হয়নি আজও। বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেছিলেন, এমনভাবে কেউ যেন তাঁর সন্তানকে না হারায়। সীমান্তে একটি পাখিও যেন বিএসএফের হাতে মারা না যায়।

হতাশার ব্যাপার হলো ভারত আমাদের বন্ধুদেশ। কিন্তু দুই দেশের সীমান্তে একটি দেশ কর্তৃক নিয়মিত ভাবে বা পরিকল্পিত ভাবে বন্ধু দেশের নাগরিককে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না কারণ এটা আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘনের মত অপরাধ। এবং এই হত্যা ভারতীয় আইনের পরিপন্থী।
ভারতের পেনাল কোড কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো আইনেই নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি করে বা নির্যাতন করে মেরে ফেলার বিধান নেই।
কেউ অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বিচার করা যেতে পারে।
কিন্তু মানুষ মারা চলতেছেই অব্যাহত ভাবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুয়ায়ী, ২০২৩ সালে ৩১ জন বাংলাদেশি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বা নির্যাতনে নিহত হয়েছেন।
২০২১ ও ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ২৩। আসকের হিসাবে এর আগে ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল—এই ১১ বছরে ৫২২ বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে বা নির্যাতনে মারা গেছেন। (সীমান্ত হত্যা কমেনি করোনাকালেও, প্রথম আলো, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০)।
এ বিষয়ে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সচিব কিরীটী সঠিকভাবেই বলেছেন, ‘এই সীমান্ত হত্যার পেছনে যে গল্প ফাঁদা হয়, তা-ও ঠিক না। তারা বলে, সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান হয়। চোরাচালানিদের হত্যা করা হয়। মনে হয় যেন সীমান্তে গরু জন্ম নেয় আর তা বাংলাদেশে পাচার করা হয়। বাস্তবে এই সব গরু আনা হয় ভারতের অভ্যন্তরে দুই-আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরের হরিয়ানা, পাঞ্জাব থেকে। গরুগুলো হাঁটিয়ে, ট্রাক-ট্রেনে করে আনা হয়। তখন কেউ দেখে না! তারা আটকায় না। কারণ, তারা ভাগ পায়। এখানে আসল কথা হলো দুর্নীতি, ভাগ-বাঁটোয়ারার মাধ্যমে সব করা হয়। যখন ভাগ-বাঁটোয়ারায় মেলে না, তখন বিএসএফ হত্যা করে।’ (বাংলাদেশকে চাপে রাখতে সীমান্ত হত্যা?, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ডয়চে ভেলে)

এখানে কিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয় বিষয়ে চুক্তি ছিল
একটি হলো— জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইনস ফর বর্ডার অথোরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ, ১৯৭৫ ও দ্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, ২০১১।

জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইনস ফর বর্ডার অথোরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ প্রটোকলের ধারা ৮ (আই) অনুসারে, এক দেশের নাগরিক যদি বেআইনিভাবে অন্য দেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে বা কোনো অপরাধে লিপ্ত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষায় যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে, তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করাটাই বাঞ্ছনীয়।
আর্টিকেল ৮(এম) অনুসারে, সীমান্ত দিয়ে যদি গরু পাচার করা হয়, তাহলে গরু ও গরু পাচারকারীদের সম্পর্কে তথ্য অপর পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং নিকটস্থ থানার পুলিশের কাছে মামলা করে গরু উদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে।কিন্তু বাস্তবতা কারো অজানা নয়।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ বাংলাদেশের সীমান্তে আধিপত্যবাদী আচরণ করা ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক বৈরী প্রতিবেশী চীন বা পাকিস্তানের নাগরিকদের সাথে এমন ঘটনা ঘটে না কিম্বা দুর্বল প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান,মায়নমার কোন দেশেই এভাবে ধারাবাহিকভাবে নির্বিচার গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে না।
এবার বাংলাদেশে ঘটা কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করি। গত ২ সেপ্টেম্বর -২০২৪ এ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সিমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে মারা গেল নিরিহ স্বর্ণা দাশ।
এ বছর ২৮ জানুয়ারি ভোরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গরপোতা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় বাংলাদেশি তরুণ রবিউল ইসলাম টুকলু।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ট্রিগার হ্যাপি: এক্সেসিভ ইউজ অব ফোর্স বাই ইন্ডিয়ান ট্রুপস অ্যাট দ্য বাংলাদেশ বর্ডার’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, অপরাধী হিসেবে সীমান্ত হত্যার শিকার ব্যক্তিরা হয় নিরস্ত্র থাকে অথবা তাঁদের কাছে বড়জোর কাস্তে, লাঠি বা ছুরি থাকে।

সীমান্তে বিএসএফের নিয়মিত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কড়া ও স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া, প্রতিটি ঘটনার বিচার ও তদন্ত দাবি করা, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে জবাবদিহি চাওয়া এবং প্রয়োজনে বারবার হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করার সময় এসে গেছে বলে মনে করি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে নজর দিবেন ।
ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানের ফলে যে জাতীয় ঐক্য সাধিত হয়েছে সেই ঐক্য দিয়ে হলেও আমাদের প্রতিহত করতে হবে সীমান্ত হত্যা।
দিনের পর দিন এটা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বাঙালী জাতীর অতীত ইতিহাস লড়াই আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়া তারা নিশ্চয়ই এর হিসাব নিবে। আমি সবাইকে আরও সচেতন ও হতে বলছি কারণ দালাল ধরে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে কত প্রান ঝরে যাচ্ছে।
বদলে যাওয়া আমার সোনার বাংলাদেশে বন্ধ হোক প্রতিবেশী শত্রু শত্রু খেলা, মোদের প্রতি মোদের অবহেলা।

(কৃতজ্ঞতাঃ লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফার কলাম ও বিভিন্ন পত্রিকা বিশেষ করে প্রথম আলো)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ