এক মুখি শিক্ষা ব্যাবস্থা। অতি সাম্প্রতিক কালের সরকার ঘোষণা করেছেন যে নবম শ্রেণিতে আর বিভাগ থাকছে না মানে বিজ্ঞান, মানবিক ও বানিজ্য শাখা থাকবে না। বিষয় গুলো হবে বাংলা,ইংরেজি, গনিত, বিজ্ঞান, সামাজিক, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ভালো থাকা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। নবম ও দশম শ্রেণি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায়। এক মুখি শিক্ষার অনেক ভালো দিক থাকলেও আমরা কি মেধাবীদের টেনে সাধারণের কাতারে নামাচ্ছি কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। এটা ঠিক যে নিচু ক্লাসে বিভাজন হলে বিকশিত হওয়ার সুযোগ কমে যায় এটা বলতেই পরেন কিন্তু শিক্ষা আসল উদ্দেশ্য কি তাতে সাধিত হয়। জীবন ও জীবিকা নামের বিষয়টি বোঝায় আসলে, এটা কি কোন রকমে ডিগ্রী নিয়ে একটা পেশায় যোগ করা প্রক্রিয়া।
তবে আশার কথা হল একটা বিষয় আছে শিল্প ও সংস্কৃতি। একটি মানুষ কে তার শিল্প ও সংস্কৃতি জানতে। একজন মানুষ যদি তার শিল্প সংস্কৃতি সম্পর্কে না জানে তাহলে তার মধ্যে দেশ প্রেমের উদ্বেগ ঘটবে না। দেশ মাটি মানুষ কে জানতে দেশজ সংস্কৃতির জ্ঞান অতিব জরুরী। কিন্তু বিজ্ঞান মাত্র একটি বিষয় করা হয়েছে তাহলে রসায়ন পদার্থবিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান মিলে হবে ১০০ নম্বর।
আগামীর ডাক্তার মাত্র ৩৩ মার্ক জীব বিজ্ঞান পড়বে আগামীর ইন্জিনিয়ারের জন্য মাত্র ৩৩ নম্বরের পদার্থ বিজ্ঞান কি কম হয়ে গেল না। সবাইকে সব কিছু জানতেই হবে ব্যাপারটা কি ঠিক। কেউ হবে ডাক্তার কেউ ইন্জিনিয়ার কেউ কবি সাহিত্যিক, কেউ দর্শনিক কেউবা বাংলাদেশ সিভিল প্রকাশনের দায়িত্ব নিয়ে দেশ সেবা করবেন। আবার কেউ ব্যাবসা করবেন।কিন্তু ব্যাবসায়ী হতে চাওয়া ছাত্রদের জন্য তেমন কোন শিক্ষার ব্যাবস্থা নেই।
এমনিতেই আমরা উদ্যোক্তা হতে চাই না। আমরা উদ্যোক্তা হবো আর শিক্ষা আমাদের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এটা আমরা আশা করতেই পরি। যে মহান মানুষের এই পাঠ্যক্রম তৈরী করছেন আপনাদের উপরই নির্ভর করছে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।
এটি একটি ক্রিকেট ম্যাচ নয় যে যা মনে হল পরীক্ষা করা হল। ইচ্ছা মত বোলার বা ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলানো হল। এখানে হাজার হাজার মেধাবী ছাত্র ছাত্রীর জীবন, হাজার হাজার গড় মেধার ছাত্র ছাত্রী দের বিকাশ ও পিছিয়ে পড়া মেধাকে মুল ধারায় আনার একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আবার খেয়াল রাখা দরকার মেধা একটা সম্পদ আর তা যেন মুকুলেই ঝরে না যায়।
নচিকেতার একটা গানের কথা বলতে ইচ্ছা করছে গানের কথাগুলো হল ” ভীড় করে ইমারত আকাশ টা চুরি করে নিয়ে যায় বিকেলের সোনা রোদ, ছোট ছোট শিশুদের শৈশব চুরি করে গ্রন্থ কীটের দল বানায় নির্বোধ। বর্তমান এই পদ্ধতিকে একমুখী শিক্ষা এটা বলা সমুচিত হবে বলে মনে হয় না বরং আমাদের দেশে যে শিক্ষা বিদ্যমান তা বহুমুখী শিক্ষা ব্যাবস্থা। তা একত্রীকরণ করতে পারলে সেটাকে বলা যাবে একমুখী শিক্ষা। কেউ ইংলিশ মিডিয়াম, কেউ জেনারেল, কেউ দাখিল, কেউ এপ্তেদিয়া, কেউ কউমী, এই যে বহুজাতিক গণ শিক্ষা, এটা চলতে পারে না। এটা একত্রীকরণ করা দরকার । না হলে শিক্ষার মাঝে যে ব্যবধান তৈরী হচ্ছে তা আগামীর জন্য ভয়ানক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
আমরা আশা করতে চাই আমাদের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী অনান্য ক্ষেত্রে যেমন মেধা ও মননশীলতার পরিচয় দিয়েছেন ঠিক তেমনি লক্ষ লক্ষ কোমন মতি ছাত্র ছাত্রী দের শিক্ষাক্রমে বাস্তব সম্মত গবেষণা করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
বেদুইন হায়দার লিও
(বঙ্গবন্ধু গবেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী)