শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন

এসকে সুর ও শাহ আলমের দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক!

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৮২২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের অনিয়ম দুর্নীতি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল আদালতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের শিকারক্তিকে ভিত্তি করে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। স্টাফ ‘ল’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জনিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের মাসোয়ারা দেয়া হতো। এসব অনিয়মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদেরও পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দেয়া হতো। গত বুধবার আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হককে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিলে তিন দিনের মাথায় গত মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি দেন তিনি। স্বীকারত্তিমূলক জবানবন্দিতে রাশেদুল হক বলেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা অনিয়ম চাপা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দিতে হতো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা করে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব অনিয়ম ম্যানেজ করতেন তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। আদালতে রাশেদুল হক বলেছেন, প্রশান্ত কুমার হালদারের ( পি কে হালদার) সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর ভালো সম্পর্ক ছিল। পিকে হালদারের মাধ্যমেই সব অনিয়মকে ম্যানেজ করতেন তিনি।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ থেকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং পরিদর্শন করার জন্য বছরে দুবার সহকারী পরিচালক থেকে যুগ্ম পরিচালক পদের দুজন কর্মকর্তা আসতেন। যারা অনিয়মকে হাইড করে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেওয়ার বিনিময়ে তারা নিতেন ৫ থেকে সাত লাখ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেখভালের জন্য গত ২০১৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পান শাহ আলম। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পদোন্নতি পেয়ে একই বিভাগের নির্বাহী পরিচালক হন, এখনও এ পদে আছেন তিনি। এসময়ে প্রায় ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়। এসব দুর্নীতি মাঠে থেকে নেতৃত্ব দেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টা আমালে নিয়েছে আদালত, সেহেতু তারা যদি আমাদের কাছে তথ্য চেয়ে নোটিস পাঠায় তাহলে অবশ্যই আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, যেহেতু আদালতে যেয়ে এই জাতীয় একটা কথা বলা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করেও আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চিন্তা চেতনা করব। পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তা কর্মচারী এখানে কাজ করে।

তাদের মধ্যে কেউ যদি অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সেসহ বাংলাদেশ ব্যাংকেরও মান ক্ষুণ্ন হয়। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে স্টাফ ‘ল’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ অন্যদিকে পি কে হালদারের সহযোগী হয়ে প্রায় ৭১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে রাশেদুল হকের বিরুদ্ধে। অভিযোগের আলোকে গ্রেফতার হন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ