শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে লক্ষ্মীপুরের স্কুলশিক্ষক বাবার পাঁচ সন্তান !

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩৭৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে লক্ষ্মীপুরের স্কলশিক্ষক বাবার পাঁচ সন্তান !

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কই পরিবারে অনেক মেধাবী সন্তান থাকতে পারে। তবে পরিবারের সব মেধাবী সন্তান একে একে দেশের সবচেয়ে নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে এমন নজির তেমন একটা শোনা যায় না। কিন্ত স্কুলশিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর পাঁচ ছেলেমেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে এমন ব্যতিক্রমী একটি নজির স্থাপন করেছে। এমন মন্তব্য লক্ষ্মীপুরের প্রত্যন্ত চর লরেঞ্চ গ্রামবাসীর। এমন মেধাবী ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার পিছনে নিজের সব সম্পত্তি ব্যয় করেও খুশি কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ছায়েদ ও তার স্ত্রী শামীমা।

সর্বশেষ ওই শিক্ষক বাবার একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছে। এ নিয়ে একে একে শিক্ষক বাবার পাঁচ ছেলেমেয়েই মেধার জোরে দেশের শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপীঠে পড়ার সুযোগ পেয়ে আলোচনায় এসেছেন।

এমন মেধাবী সন্তানদের নিয়ে গ্রামবাসীরাও খুশি। শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ নোয়াখালীর সুবর্ণচরের দক্ষিণ ওয়াপদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা করে বর্তমানে অবসরে রয়েছেন।

সন্তানদের প্রসঙ্গে কথা হয় এ গর্বিত বাবার সাথে। শিক্ষকতার সৎ উপার্জন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করতে পেরেছেন বলে খুশি তিনি। জানান, শুরুটা হয় ২০০৭ সালে। তার বড় ছেলে শামসুল আলম দিপু ২০০৭-০৮ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে ভালো ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। পরে সে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। বর্তমানে তিনি সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

দ্বিতীয় ছেলে শাজাহান সিরাজ আল মামুন ২০১০-১১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে কৃতিত্বের সাথে লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে ছেলে মামুন। বর্তমানে শাজাহান সিরাজ আল মামুন কর্মসংস্থান ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

তৃতীয় ছেলে আশরাফুল ইসলাম শহীদ ২০১১-১২ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। আশরাফুল ইসলাম শহীদ বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

চতুর্থ ছেলে শরীফুল ইসলাম বিজয় ২০১৬-১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত রয়েছেন।

আর চলতি বছর তাদের একমাত্র মেয়ে ২০২১-২২ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৫৯৯তম হয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।

ছায়েদ উল্লাহ বলেন, “আমার ছোট মেয়ে একজন জজ হতে চায়। আমি দীর্ঘ ৩০ বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। আমি অন্যের ছেলেমেয়েকে সুশিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেছি, আবার আমার ছেলেমেয়েদেরও সুশিক্ষিত করার জন্য সর্বদাই সচেষ্ট ছিলাম। আমার সব সন্তান এখন দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র।”

নিজ উপজেলার এমন মেধাবী পরিবারের বিষয়ে কমলনগরের সাংবাদিক মোঃ ইব্রাহীম বলেন, “ছায়েদ উল্লাহ স্যারের সব ছেলেমেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার চান্স পেয়েছে এটা শুনেই ভালো লাগছে। তারা কমলনগরবাসীকে সম্মানিত করেছে।”

উদয়ন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল আমিন মন্তব্য করেন, তাদের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসসহ ছায়েদ স্যারের সব ছেলেমেয়ে অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র। এমন শিক্ষার্থী পাওয়া বর্তমানে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ