শেখ কামাল একটি নাম নয় একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছেলে অথচ ছিলেন খুব সাধারণ।তিনি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাস্ত থাকতেন। আজকের আবহানি তার অবদান। তিনি দেশের সনামধন্য থিয়েটার ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
সেই দলের সদস্য ছিলেন অভিনেত্রী ডলি জহুর। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন;
শেখ কামাল রিহার্সাল শেষে বাসায় দিয়ে যেতেন । কারণ, ডলি জহুর তখন হাতিরপুলে থাকতেন। ডলি জহুরকে বাসায় পৌছে দিয়ে তারপর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাসায় যেতেন শেখ কামাল।
ডলি জহুর বলেন,
আমি উনার ছোট বোন শেখ রেহানার বান্ধবী ছিলাম। ছেলেরা ছোট বোনের বান্ধবীদের সাথে কত রকম দুষ্টামী করে। উনি কোনদিন তাও করেননি। ভুল করেও বলেন নি – ডলি তোর হাতটা দেতো ধরি । এক কথায় কামাল ভাই ছিলেন আপন বড় ভাইয়ের মতই ভাই। শুধু আমি কেন, যেসব মেয়েরাই উনার সাথে মিশতো সবাই এই কথা স্বীকার করবেন। আর এই দেশের মানুষ তাকে নিয়ে কত রকমের অপপ্রচার চালালো। কামাল ভাই নাকি কার বৌকে (মেজর ডালিম) তুলে নিয়ে গেছেন হ্যান ত্যান। মানুষ এত মিথ্যাবাদী হয় কি করে, আমি ভেবে পাই না। স্বার্থ মানুষকে ভিতর-বাহির থেকেই নষ্ট করে দেয়।প্রেসিডেণ্টের ছেলে হয়েও তার কাছে সবসময় টাকা থাকতো না। এ নিয়ে অনেক ক্ষ্যাপাত ক্যাম্পাসেও তার বন্ধুরাও। যেদিন কামাল ভাইয়ের কাছে টাকা থাকত না, সেদিন রাতে হেঁটে যেতাম। যেদিন টাকা থাকত সেদিন যেতাম রিকশায়। কত রাতের পর রাত উনার সাথে আমি একা বাসায় ফিরেছি অথচ এক বারের জন্যও আমি তাকে আমার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাতে দেখিনি।
তা ছাড়া কামাল ভাই ছিলেন প্রেসিডেন্টের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জন্য শত শত মেয়ে পাগল। কখনও কোনদিন আমরা তাকে সেসব মেয়েদের পাল্লায় পরতে দেখিনি। তিনি কি পারতেন না সেসব মেয়েদের সাথে নোংরামী করতে ??
এখানেই শেষ নয়। সুলতানা কামালকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন কামাল ভাই। সুলতানা আপা ছিলেন নামকরা একজন খেলোয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলা ধুলার জন্য তিনি এক নামে পরিচিত ছিলেন। অনেক লম্বা আর শক্ত পেটা শরীর। আমরা উনাকে ভয় পেতাম। সহজে কেউ সুলতানা আপার কাছে যেতাম না। ছেলেরাও ভয় পেত তাকে। এড়িয়ে চলত। সেই সুলতানা আপাকে পছন্দ করে বসলেন কামাল ভাই। আর তার হয়ে সুলতানা আপার কাছে এই কথাটা বলার দ্বায়িত্ব দেন আমাকে। আমি তো ভয়েই শেষ। না করে দিলাম। কিন্তু কামাল ভাইয়ের জোরাজোরিতে রাজী হলাম। কথা দিলাম সুলতানা আপাকে জানাবো যে কামাল ভাই আপনাকে পছন্দ করে। কিন্তু দিন যায়, মাস যায় জানানো আর হয় না। কি করে হবে ?? আমি যতবার সুলতানা আপার কাছে এইকথা বলতে গিয়েছি ততবারই ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। আমি ভীতু, তেলাপোকা দেখে মরে যাই এসব কত্তো রকমের কথা শুনালো কামাল ভাই।অবশেষে নিজেই একদিন সুলতানা আপাকে জানালেন তার মনের কথা। এবং হলেন প্রত্যাখ্যাত। সুলতানা আপা বলে দিলেন প্রেম ট্রেম করতে পারবেন না। এতই যদি ভাল লাগে তবে যেন বাসায় লোক পাঠায়। তাই করে- -ছিলেন কামাল ভাই।
শেখ কামাল বঙ্গবন্ধুর সন্তান। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন শেখ মুজিব একদিন বসে ছিলেন শেখ হাসিনা ও শেখ কামাল খেলছিনেন হঠাৎ শেখ কামাল শেখ হাসিনা কে বলেছিল হাসু আপু হাসু আপু আমি তোমার আব্বা কে আব্বা ডাকি। সারাজীবন পিতার স্নেহ বঞ্চিত অথচ আদর্শ ধারণ করা শেখ কামাল আমাদের আদর্শ।
আজ অমক নেতার অমক রা যখন দেশ অশান্ত করে তখন শেখ কামালের ইতিহাস হতে পারে ভালো রাজনীতিবীদদের অনুপ্রেরণা।বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেশের মানুষকে শান্ত রাখতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতি ঘৃনার জন্ম দিতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়েছে ঘাতকের দল।শেখ কামাল ও সেই অপচেষ্টার শিকার। ৫ টাকার বাদাম কিনে যে ছেলে তার ছোট বোন আর তার বান্ধবীদের খুশি করতে পারত না, তার নামেই ছড়ানো হয়েছে ব্যাংক লুটের কিচ্ছা-কাহিনী।
আমি শুনেছি তৎকালীন এসপি মাহাবুব এর কাছে সেই রাতের কথা। ব্যাংক ডাকাতির কোন ঘটনায় ঘটেনি। বরং এসপি মাহাবুব রা মনে করেছিলেন সেই রাতের গাড়িটা গণবাহিনীর। আমরা ইতিহাস পড়ে জেনেছি জাসদ গণবাহিনীর গনবিরোধী কার্যকলাপের কথা।
এগুলো ছিল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। নির্লোভ নিরহংকার মানুষ ছিলেন শেখ কামাল।খুনি মোস্তাক ফারুক গং রা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যদি কিছু পেত তাহলে অপপ্রচার কি পরিমাণ বাড়ত তা বলা মুসকিল। পাওয়া যায়নি উল্লেখ করার মত তেমন কোন ব্যাংক একাউন্ট। তাই আর তারা বাড়াতে পারেনি অপপ্রচার।
আজ ৫ই আগস্ট এই ক্ষনজন্মা, সাংস্কৃতিমনা তারুন্যের মডেল আবাহনী ক্রীড়া চক্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযুদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এঁর ৭২ তম শুভ জন্মদিন। বিনম্র শ্রদ্ধা।দেশে আজ এমন মানুষদের বড় প্রয়োজন।