জাতীয় জীবনে প্রাথমিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক জনসংখ্যাকে দক্ষ করে গড়ে তোলার ভিত্তিমূল হলো প্রাথমিক শিক্ষা। তাই আর্থ-সামাজিক শারীরিক মানসিক সীমাবদ্ধতা এবং ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে দেশের সকল শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। শিক্ষার এই স্তর পরবর্তী সকল স্তরের শিক্ষা ভিত্তি সৃষ্টি করে বলে যথাযথ মানসম্পন্ন উপযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। প্রাথমিক শিক্ষার পর অনেকে কর্মজীবন শুরু করে। তাই গুনগত মানের প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা আজ যুগের দাবি যা তাদের পেশাগত জীবনে সহায়ক হয়।
উন্নয়নের জন্য শিক্ষা বিষয়টি আজ বিশ^জনীন যেহেতু উন্নয়নের প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে শিক্ষা আর সকল স্তরের শিক্ষার ভীত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা সেহেতু প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব আজ সর্বজন স্বীকৃত। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে গরহমধঃ (১৯৯৫) ব্যক্ত করেন যে, যদি কোন দেশের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ আরেকটি দেশের চেয়ে ৯০ শতাংশ বেশি থাকে, তাহলে ৩০ বছর পর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অন্তত ৭৫ শতাংশ বেশি হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সফল নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার পর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে প্রাথমিক শিক্ষাকে রাষ্ট্রের গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ব হিসাবে ঢেলে সাজানো হয় এবং স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্ট্রে নি¤œলিখিত বিধান গুলো সুষ্পষ্ট করা হয়।
একটি অভিন্ন জনসম্পৃক্ত ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সকল শিশুদের জন্য বিনামুল্যে ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রসার যা আইন দ্বারা নির্ণয় করা যেতে পারে। শিক্ষাকে সমাজের চাহিদা পূরনে সক্ষম এমন প্রশিক্ষিত ও প্রনোদিত নগারিকদের বের করা। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণ আইন দ্বারা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
সরকার জাতীয় দায়িত্ব হিসাবে প্রাথমিক শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার স্বীকার করে যা বাংলাদেশের একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৬১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১,৫৬,৭২৪ জন শিক্ষককে সরকারি করে প্রাথমিক শিক্ষার গতির সঞ্চার করেন।একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার গুরত্ব অপরিসীম। বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে অভ্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন।
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার আদর্শিক চিন্তার ধারাবাহিকতায় ০৯/০১/২০১৩ সালের ২৬,১৯৩ টি রেজিষ্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েকে জাতীয়করণ এবং ১,০৩,৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষাখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখা হচ্ছে। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচী-৪ এর মাধ্যমে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রাক্ প্রাথমিক শ্রেণি চালু করণ। প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি সজ্জিত করনের জন্য আলাদা বরাদ্দ প্রদান এবং ২০২৩ সাল থেকে দুই বছর মেয়াদী প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা চালুকরন
বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশু ভর্তির হার প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়া রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
বছরের ১ম দিনেই বিনামূল্যে শতভাগ নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে অভিন্ন প্রশ্ন পত্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। ভিশন-২০২১ অর্জনের লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে সহযোগিতা করছে। পিটিআই সমুহে আইসিটি ল্যাব স্থাপন করে শিক্ষকদের আইসিটি এডুকেশন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে। ই মনিটরিংয়ের মাধ্যমে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হচ্ছে।
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতি বছর আন্তঃ প্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুন্নেছা গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের মনোভাব এবং সেবামূলক মানসিকতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্টুডেন্ট কাউন্সিল ও ক্ষুদে ডাক্তার টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা পর্যায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের বিদেশ গমন এবং দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষকদের বিদেশে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। মোট কথা আজকের শিশুকে ভবিষ্যতে দক্ষ এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ভবিষতে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য জরুরী
প্রতিটি বিদ্যালয়কে ১ শিফটে রূপান্তর,শিক্ষক ঘাটতি পূরণ, প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ , শিক্ষকদের সম্মানজনক ও উচ্চতর বেতন গ্রেড, বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষকদের পদন্নোতির ব্যবস্থা করা, দক্ষ ও পরিশ্রমী শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রনোদনার ব্যবস্থা করা, ভাসমান শিশুদের মূল শিক্ষা ধারায় এনে শিক্ষার ব্যবস্থা করা। বর্তমানে শিক্ষা বান্ধব সরকার দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করে জনগণের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। এরপরও প্রাথমিক শিক্ষায় বিরাজমান কতিপয় চ্যালেঞ্জ কাঙ্খিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করছে।
শিক্ষা ও শিক্ষকের উপর থেকে বিরাজমান বৈষম্য দূর করা জরুরী। বিশ্বের সব দেশের শিক্ষকদের যোগ্যতা ও মর্যাদা এক ও অভিন্ন। স্বাধীন সার্বভৌম বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় এক ও অভিন্ন মর্যাদা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক পরিবার মাথা উঁচু করে মর্যাদার আসনে আসীন হোক একজন শিক্ষক হিসাবে একান্ত কাম্য।