এম এ কবীরঃ
জীবনযাপনের,জীবনধারণের এবং জীবন সাজানোর বেশিরভাগ উপাদানের নিরবচ্ছিন্ন জোগানদার হলো প্রকৃতি। প্রকৃতি আমাদের কী না দেয়! খাদ্য, ফলমূল থেকে শুরু করে ওষুধ, পথ্য, পানীয়, কাপড়, এমনকি বাড়ি-ঘর নির্মাণের উপাদান। নিশ্বাস নেয়ার জন্য অক্সিজেন জোগান দেয়া, জীবন-জীবিকার উপায় সৃষ্টি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা পালন-সবকিছুই প্রকৃতির অবদান। এমনকি আমাদের ভেতরের মানবিক আবেগ আর শৈল্পিক অনুভবকে জাগিয়ে তোলার অনুপ্রেরণাও প্রকৃতি। প্রকৃতিতে জীবজগৎ ও উদ্ভিদ জগতের যথার্থ সহাবস্থান আর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য মানুষের নিজের টিকে থাকার পূর্বশর্ত।
ভারতের বাঁধে ভাটির বাংলাদেশ খরায় শুকায়, হঠাৎ বানে ভাসে! ব্রহ্মপুত্র – বরাক অববাহিকার উজানে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে চলে নির্বিচার বাণিজ্যিক বনায়ন, পাহাড় কাটা, পাথর উত্তোলনসহ খনিজ আহরণের বিশাল সব আয়োজন। প্রাকৃতিক বিন্যাসকে চ্যালেঞ্জ করা, আমূল পরিবর্তন করে দেয়া কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়। নদীকে একদিকে বাধাগ্রস্ত করলে অন্যদিকে সে যে গতিপথ খুঁজে নেয়, তা হয় অনেক বেশি বিধ্বংসী।
একটার পর একটা প্রতারণার খবর বের হচ্ছে। এই প্রতারণা হচ্ছে নানা কৌশলে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে। সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতারকেরা নিয়ে যাচ্ছে। আইনের ফাঁক গলিয়ে তারা রেহাইও পেয়ে যাচ্ছে। সুকুমার রায় ছোটদের জন্য লিখেছেন প্রচুর। তার শিশুসাহিত্য সমগ্রে ‘পাজি পিটার’ নামক যে জনপ্রিয় চরিত্রটি আছে সেটা একজন প্রতারকের। পিটারের প্রতারণাগুলো অভিনব। তার লোক ঠকানোর কৌশল আমাদেরকে অভিভূত করে। যুবক পিটারের হয়তো সুযোগ ছিল সৎপথে জীবিকা নির্বাহের। সে যে তা করেনি গল্প পাঠে মনে হয়, সে রকম কোনো ইচ্ছেই তার ছিল না কখনও। প্রতারণাতেই তার সুখ, প্রতারণাতেই তার আনন্দ।
শহিদুল ইসলাম,ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার ভাতঘরা দয়াপুর সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। অবসর কাটাতে ফলের বাগান করেন। বাগানে দার্জিলিং কমলা, ম্যান্ডারিন কমলাসহ অন্যান্য ফলের গাছ রয়েছে। গত বছর বাগানের ম্যান্ডারিন ও দার্জিলিং কমলা পাঁকার আগে প্রচুর রস ছিল তবে যখন পাঁকার সময় আসে তখন রস শুকিয়ে যায়। উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের কৃষক আসাদ শেখ ইউটিউব ও বিভিন্ন গণ মাধ্যমের ভিডিও দেখে চায়না কমলার চাষ করেন কিন্তু ফল পাকার পর দেখা যায় রস শুকিয়ে খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। ফল বিক্রি করতে না পেরে তিনি বাগান কেটে ফেলেন। যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার ২৫ জন কৃষক তাদের শতাধিক বিঘার চায়না কমলা গাছ একই কারণে কেটে ফেলেন। ঝিনাইদহের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আলমগীর হোসেন বলসুন্দরী কুলের চারা লাগিয়ে ফল আসার পর দেখেন অন্য জাতের কুলের চারা তাকে দিয়ে প্রতারিত করা হয়েছে। মাগুরার নাসির হোসেন ইউটিউবে ফাতেমা ধানের বাম্পার ফলনের ভিডিও দেখে ওই ধানের চাষ করে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই চিত্র সারা দেশের। হাজারো কৃষি উদ্যোক্তা ইউটিউব, ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উৎসাহিত হয়ে নতুন নতুন দেশি-বিদেশি ফল ফসলের চাষ করে দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন,নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর ফসলী জমি। ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তরা বলেছেন, বেকারত্ব ঘোচাতে কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই কৃষিখাতকে বেছে নিয়ে তারা ধোকায় পড়েছেন। তারা বিশ^াস করেন কৃষিখাত থেকে স্মার্ট রোজগার করা সম্ভব তবে সঠিক নির্দেশনার অভাব ও কৃষিখাতে প্রতারকদের দৌরাত্মের কারণে তারা এমন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তারা জানান, অধিক মুনাফালোভী এক শ্রেণির উদ্যোক্তা যেকোন ফল ফসলের চারা উৎপাদন করে অথবা অন্য কোথা থেকে সংগ্রহ করে অধিক লাভের অসত্য গল্প শুনিয়ে ইউটিউব, ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করে। এর মাধ্যমে তারা প্রবাস ফেরৎ শিক্ষিত তরুণ, বেকার যুবক এবং যারা নিজের যায়গা জমি থেকে বাড়তি আয়ের চিন্তা করেন তাদের প্রলুব্ধ করেন। আগ্রহীরা না বুঝে সেই ফল ফসলের চারা লাগান,চাষ করেন। কয়েক বছর পর যখন ওই সকল উদ্যোক্তার বাগানের গাছে ফল আসে তখন তারা বুঝতে পারেন, তারা ধোকায় পড়েছেন। কালিগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম ভিয়েতনামি নারিকেলের চারা লাগিয়ে ৪ বছরেরও গাছে ফল না আসায় এ বছর আবারও বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। বিরাজমান সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তারা বলেছেন- চারা বিক্রেতাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নিবন্ধন থাকা দরকার। নার্সারী পরিদর্শন করে মাতৃগাছের বয়স ও সংখ্যা অনুযায়ী চারা তৈরির সম্ভাব্যতা নির্ধারণ, চারা বিক্রির রেজিষ্টার সংরক্ষণ, নিবন্ধিত সকল নার্সারীতেই পর্যাপ্ত মাতৃ গাছ থাকা, চারা বিক্রির সময় ভাউচার দেয়া, বিভিন্ন বয়সী চারার মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ, সরকারিভাবে পরিক্ষীত নয় এমন কোনো বিদেশি ফল ফসলের চারা উৎপাদন এবং ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, অঞ্চল ভিত্তিক মাটির গুনাগুন ও আবহাওয়া বিবেচনায় নিয়ে কোন ফল ফসল চাষ করলে কৃষক লাভবান হবে তা প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে বিলবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের জানানো, কোনো উদ্যোক্তা বিদেশি ফল ফসলের চারা উৎপাদন করে সরকারিভাবে অনুমোদন না নিয়ে তা যেন বিক্রয় করতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারী করা। কৃষি উদ্যোক্তা ও গণমাধ্যম কর্মী মিজানুর রহমানের মতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশি বিদেশি ফল ফসলের চাষ করে যারা প্রতারিত তাদের নিয়ে সেমিনার কিংবা মত বিনিময় সভা করার উদ্যোগ কৃষি বিভাগ নিতে পারে। তবে এরই মধ্যে যশোর অঞ্চলে সরকারিভাবে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন, শস্য উৎপাদনে বৈচিত্রতা আনা, নিরাপদ ফসল উৎপাদন, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি, কৃষি বাণিজ্যিকীকরণসহ নানা সুবিধা দিতে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২৮ হাজার ৬২০ জন কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় উচ্চমূল্যের নিরাপদ ফসল উৎপাদন ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি হবে। এছাড়া ব্যয় সাশ্রয়ী ও ফলপ্রদ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চ মূল্য ফসলের উৎপাদনশীলতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় ২০ শতাংশ কম করে কৃষিকে লাভজনক করা হবে। পাশাপাশি খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের জন্য ১ হাজার ৮০০ জন শিক্ষিত তরুণ ও নারী কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। ‘যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে এসব লক্ষ্য অর্জন করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সভায় দেয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদিত এ প্রকল্প ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। প্রকল্পে বলা হয়েছে, দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদাপূরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত সকল পর্যায়ে কৃষককে লাভজনক করা আবশ্যক। এ উদ্দেশ্য অর্জনে উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদন, টেকসই কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, সংগ্রহ এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের কৃষির মূল ধারায় অর্ন্তভুক্ত করা অপরিহার্য।
বাংলাদেশে পুষ্টিকর উচ্চমূল্যের শস্য উৎপাদন, কৃষি পণ্য বিপণনে অঞ্চলভিত্তিক সম্ভাবনা ও সুযোগ কাজে লাগানো, শিক্ষিত নারী, তরুণ ও যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে অবদান রাখার জন্য প্রকল্পটি করা হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ৩৪ হাজার ৬৬২টি কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এছাড়া ৬২টি কৃষি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র নির্মাণ, ৩১৮টি বিদ্যুৎবিহীন কুলিং চেম্বার, ৯৩টি কৃষি প্রযুক্তি মেলা, ১২৪টি উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, ৩ হাজার ৪৬৬টি মাঠ দিবস আয়োজন, ২ হাজার ৬৯২ ব্যাচ অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ এবং ৩০ হাজার ৯৫৯টি কৃষি সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হবে। প্রকল্পের আওতাভূক্ত জেলা ও উপজেলাগুলো হচ্ছে- যশোরের সদর, শার্শা, মণিরামপুর, কেশবপুর, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, বাঘারপাড়া এবং অভয়নগর উপজেলা। মাগুরার সদর, শালিখা, শ্রীপুর ও মহম্মদপুর উপজেলা। ঝিনাইদহের সদর, মহেশপুর, হরিণাকুন্ডু, কোটচাঁদপুর, শৈলকুপা এবং কালীগঞ্জ উপজেলা। কুষ্টিয়ার সদর, দৌলতপুর, ভেড়ামারা, মিরপুর, খোকসা ও কুমারখালী উপজেলা। চুয়াডাঙ্গার সদর, দামুড়হুদা, জীবননগর, আলমডাঙ্গা এবং মেহেরপুরের সদর, মুজিবনগর এবং গাংনী উপজেলা। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি নেয়ার আগে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট প্রযুক্তি এবং কার্যক্রম প্রতিপালন করে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ, কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের স্বার্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রকল্পের ঝুঁকি হিসাবে যশোর অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় বৃদ্ধি এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ,বারিড পাইপ সেচ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, নিরাপদ উপায়ে চারা উৎপাদন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান জানান, ‘যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ’ প্রকল্প বাস্তবভিত্তিক। সরকার একটি সময় উপযোগী প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কৃষি অর্থনীতির চিত্র বদলে যাবে। উপকৃত হবে কৃষক।
বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে যে কৃষি তার উন্নতি নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের বিবরণ প্রতিনিয়তই শুনছে দেশের মানুষ। নেদারল্যান্ডস কৃষি খাতে বছরে মাথাপিছু ৩১৪ ডলার, ভারত ৩৪ ডলার ও মায়ানমার ২৬ ডলার বিনিয়োগ করে। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১৬ ডলার বিনিয়োগ করা হয়। যে কারণে বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি ধানের উৎপাদন ৪ হাজার ৭৩৫ কেজি, আর চীনে তা ৭ হাজার কেজির বেশি। অন্যদিকে দেশে কৃষিজমি কমে যাওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা সমস্যা বাড়ছে।
দেশের ৭৮ লাখ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে ৫৫ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা যায়। এক হেক্টর মানে সাড়ে সাত বিঘা। বিঘায় গড়ে ২০ মণ ধান উৎপাদন ধরলে হেক্টরে ৫ টনের বেশি উৎপাদন হয়। তাহলে বোরো মৌসুমে ২ কোটি ৭৫ লাখ টন ধান উৎপাদন সম্ভব। আমন মৌসুমে দেড় কোটি টন আর আউশ মৌসুমে ৫০ লাখ টন ধান উৎপাদন তো সহজেই করা সম্ভব। তাহলে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টন ধান উৎপাদন করতে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ধান থেকে ৬৬ শতাংশ চাল উৎপাদন হয়। সে হিসেবে ৩ কোটি ১০ লাখ টন চাল তো উৎপাদিত হতেই পারে। দিনে গড়ে ৪০০ গ্রাম চাল খাই আমরা। ছোট শিশু থেকে মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ ১৭ কোটি মানুষের সবাইকে এই হিসাবে ধরলে বছরে চাল লাগার কথা ২ কোটি ৪৮ লাখ টন। প্রশ্ন উঠছে,তাহলে খাদ্যঘাটতি কেন, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করে বছরে ৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয় কেন, ধান ওঠার মৌসুমেই চাল আমদানিতে এত ব্যস্ত হতে হয় কেন, বছরব্যাপী চালের বাজার এত চড়া কেন? তেলের দাম বাড়ানোয় ধানের চাষ করাই দুষ্কর হয়ে গেছে। হাল চাষের খরচ বেড়ে গেছে। শ্যালো মেশিনে সেচের খরচ বেড়ে গেছে। খরচ বেড়েছে বলে কৃষক কি তাহলে ধান চাষ কমিয়ে দেবেন? না। কারণ ধান আবাদ না করে তার কোনো উপায় নেই। পেটের দায়ে এবং উপায় নেই বলে কৃষক যদি চাষাবাদ করে তাকে কি স্থায়ী উন্নয়নের কৃষি অর্থনীতি বলা যাবে?
এম এ কবীর : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সভাপতি, ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি